রাশিদ রিয়াজ : বিজেপি নেতারা স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। কিন্তু শুধু কংগ্রেস নয়, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্থহীন মন্তব্য ও নিখাদ মিথ্যা কথা বলার তালিকায় আর একটি বিষয় সংযোজিত হল।’
এর আগে ঝড়বৃষ্টিতে মেঘের কারণে পাকিস্তানের রেডার কাজ করে না বলার পর আবার মেল নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একটি বেসরকারি হিন্দি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোদী দাবি করেন, ১৯৮৭-৮৮ সালে তিনিই ভারতে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেন এবং তখন খুব কম লোক ই-মেল ব্যবহার করত। লালকৃষ্ণ আদভানি গুজরাটে একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি ডিজিটাল ক্যামেরায় সেই ছবি তুলে দিল্লিতে ট্রান্সমিট করে দেন। পরের দিন খবরের কাগজে রঙিন ছবি বের হয়। আদভানিজি অবাক হয়ে যান...
মোদীর এই আপাতনিরীহ বক্তব্য নিয়ে এর পর প্রবল হইচই শুরু হয়ে যায়। কারণ, ভারতে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ ও সাংসদ আহমেদ প্যাটেল টুইট করে বলেন, ‘যতদূর আমার মনে পড়ছে, ভারতে সকলের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত নই, প্রধানমন্ত্রী ১৯৮৭-৮৮ সালে কী করে ই-মেইল পাঠালেন এবং কাকে পাঠালেন?’ কংগ্রেসের সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা দিব্যা স্পন্দনার প্রশ্ন, ‘১৯৮৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ই-মেইল আইডি কী ছিল? আর ই-মেল তিনি কাকে করেছিলেন, তখন অন্য কারও তো মেল আইডি ছিল না।’
আহমেদ বলেন, এমন নয় যে, ১৯৮৮ সালে ই-মেল বলে বস্তুতি ছিলই না। ১৯৭১ সালে রে টমলিনসন প্রথম ই-মেইল নিজেকে পাঠাতে পেরেছিলেন। প্রচুর গবেষণার পর ১৯৮৩ সালে আধুনিক ইন্টারনেটের জন্ম হয়। বিশ্ব জুড়ে ডব্লিউ-ডব্লিউ-ডব্লিউ বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব চালু হয় ১৯৯১ সালে। আর ভারতে বিএসএনএল ১৯৯৫ সালের ১৪ আগস্ট ইন্টারনেট চালু করে। ডিজিটাল ক্যামেরার ধারণাটা আসে ১৯৭৫ সালে। কিন্তু ফুজি প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে ছাড়ে ১৯৮৯ সালে। তার পর অ্যাপল কোম্পানির সৌজন্যে ১৯৯৪ নাগাদ তা রীতিমতো জনপ্রিয় হয়। তাই মোদীজি যে সালের কথা বলছেন, তখন ই-মেল বা ডিজিটাল ক্যামেরা দুটোই ভারতে অন্তত থাকার কথা নয়।
মোদীর এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একজন মন্তব্য করেন, ‘চ্যানেল ৯ এ দেওয়া মোদীর সাক্ষাৎকার পুরো পাগলের প্রলাপ। দেখলেই বোঝা যায়,সম্পূর্ণ শিখিয়ে,পড়িয়ে দেওয়া শো। তারপরও এত ভুল? আসলে হারের আতংক মোদীর বুকে চেপে বসেছে। গলায় এঁটে বসেছে নির্বাচনে মারের ভয়।’
কংগ্রেস ওই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষের ভিডিও তুলে ধরে বলেছে, এর পর আর দয়া করে জিজ্ঞাসা করবেন না, কংগ্রেস ৬০ বছরে কী করেছে। আর দিব্যা স্পন্দনা আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে একটি রিটুইট করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘মোদীজি আসলে বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, এটা ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের কথা নয়, খ্রিস্ট-পূর্বাব্দের কথা। কারণ, তার বন্ধু তো বলেই দিয়েছেন, মহাভারতের যুগে ইন্টারনেট ছিল।’ বন্ধুটি হল, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, যিনি কিছুদিন আগে ওই বিতর্কিত মন্তব্য। অর্থাৎ, মোদীর কথা নিয় ব্যঙ্গবিদ্রুপ সমানে চলছে।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অর্থহীন মন্তব্য ও নিখাদ মিথ্যা কথা বলার তালিকায় আর একটি বিষয় সংযোজিত হল।’ এআইএমআইএম-এর নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মন্তব্য হচ্ছে, ‘মোদী বলেন, তার কাছে কোনও পয়সা ছিল না, কিন্তু ১৯৮৮ সালে তার কাছে ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল। ই-মেইল আইডি ছিল। এটা মজাদার কথা, একই সঙ্গে প্রবল অস্বস্তিকর। প্রধানমন্ত্রী যা মনে আসে সেটাই বলে দেন। তাকে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সম্ভবত ভরসা করা যায় না।
ভারতে মোদীর রাজনৈতিক বিরোধীরা সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, বিরোধী নেতা ও নেত্রীদের সামান্য বিচ্যুতি হলে তা নিয়ে রঙ্গব্যঙ্গ করার একটা সুযোগও ছাড়েন না তিনিও। এ ক্ষেত্রে তো অস্ত্রটা মোদী নিজেই বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ফলে বিরোধীরা তার সদ্ব্যবহার করছেন পুরোদমে। টাইমস অব ইন্ডিয়া
আপনার মতামত লিখুন :