ইকবাল খান : ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি নিহতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশার মেঘ এখনো কাটেনি। তার মধ্যেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ‘অভিনব’ মেঘতত্ত্ব নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।আনন্দবাজার, এনডিটিভি।
শনিবার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ নেশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘হঠাৎই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায় (২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোটে বিমান হামলা চালানোর দিন)। আকাশে মেঘ ছিল... ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। সন্দেহ ছিল আমরা (ভারতীয় যুদ্ধবিমান) মেঘের মধ্যে দিতে যেতে পারব কিনা।
পর্যালোচনার সময় (বালাকোটে অভিযান) অনেকের মতামত ছিল, সময় পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিনা। আমার মনে দু’টি বিষয় ছিল। এক, গোপনীয়তা..., দ্বিতীয়ত, আমি বলেছিলাম, আমি বিজ্ঞানী নই। আমি বললাম, আকাশে প্রচুর মেঘ এবং বৃষ্টি। এটার সুবিধাও আছে। আমি খালি চোখে যা বুঝি, মেঘ আমাদের সুবিধাও দিতে পারে। আমরা রাডারকে ফাঁকি দিতে পারি। সবাই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমি বলি, মেঘ আছে, অগ্রসর হই।’
অথচ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মেই আকাশে মেঘ থাকা বা না থাকার উপর রাডারে বিমানের সিগন্যাল পাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ রাডার কাজ করে ‘রেডিয়ো ওয়েভ’-এর মাধ্যমে। মেঘ বৃষ্টি এই রেডিয়ো ওয়েভ-এ কোনও প্রভাব ফেলতে বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না। ফলে যে কোনও পরিবেশেই আকাশে বিমান বা যুদ্ধবিমানের গতিবিধি ধরতে পারে রাডার।
স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর এই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তুমুল চর্চা। প্রচুর পোস্ট, কমেন্টস। সেগুলির অধিকাংশই মোদীকে সমালোচনা করে। রয়েছে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, এমনকি, উপহাসও।
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির টুইট করে বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা তুচ্ছ বিষয় নয়। মোদীর এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ক্ষতিকারক। এই রকম একজনও দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।’ কেউ লিখেছেন, ‘হাস্যকর’।
মোদীর সাক্ষাৎকারের এই অংশটি বিজেপির তরফে টুইটারেও ফলাও করে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যখন তীব্র সমালোচনা শুরু হয় তখন সেই টুইট ডিলিটও করে দেওয়া হয়। তবে অনেকেই স্ক্রিন শট নিয়ে রেখেছিলেন। ফলে ওয়েব-দুনিয়া থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারেনি সেই টুইট। সেটা নিয়েই এখনও সরগরম টুইটার-ফেসবুক। খোঁচা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রসবোধের পরিচয় দিয়ে কাশ্মীরের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ‘পাকিস্তানি রাডার মেঘ ভেদ করে সিগন্যাল ধরতে পারে না। ভবিষ্যতে বিমান হামলার ক্ষেত্রে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!’’
আর টুইট মুছে দেওয়া নিয়ে তাঁর খোঁচা, ‘‘মনে হচ্ছে, মেঘের আড়ালে এই টুইটও হারিয়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস স্ক্রিন শটটা ছিল।’’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায় ভারতীয় যুদ্ধ বিমানগুলো।
আপনার মতামত লিখুন :