মাধবীলতা : আঁখি আলমগীরের কথার জের ধরে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, আসলেই কোনো মেয়েকে কখন এই সমাজ মানুষ বলে মেনে নেবে? যখন কৈশোরে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়, তখন এই সমাজ বারবার বলতে থাকে এই বয়সে পালিয়ে বিয়ে করলো নাকি মেয়েটা? কী দেখলো ঐ ছেলেতে, যে পরিবারও মেনে নিলো? যখন বিয়েটাকে বিয়ে বলে মানতে থাকে মেয়ে, তখন এই সমাজ বলে, “আরে এ কেমন বিয়ে...? এই ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে? এই মেয়েকে কি আর কোথাও পাত্রস্থ করতে পারলো না? যখন মেয়েটিকে প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে ছেলেটা চলে গেলো, তখন এই সমাজ মেয়েটিকেই বলতে লাগলো শিক্ষিত হয়ে পাখা গজিয়ে গেছে, তাই সংসারে মন বসলো না?
পড়াশুনায় ভালো হয়েও যখন এমএস, পিএইচডি হলোনা..., তখন এই সমাজ বলতে লাগলো, “কিসের এতো ভাব যে, সিম্পল এমএসসি নিয়ে বড়াই? প্রথম শ্রেণির একটা সরকারি চাকরি করেও দিন আনতে পান্তা ফুরানো ছাপোষা কেরানির মতো জীবনযাপন করতে থাকলো, তখন সমাজ বললো, “আগে টাকার কথা ভাবলে আজকে মালয়েশিয়াকে দ্বিতীয় শহর বানিয়ে সুখে দিনাতিপাত করতে পারতো। আবার যখন টাকার কথা ভাবলো মেয়েটি, তখন উচ্চাভিলাষী আর বেপরোয়া হয়ে গেলো মেয়ে। যখন বিয়েতে প্রেম ছিলো না, তখন মেয়ের বাইরে কোথাও সম্পর্ক খুঁজে বের করার হলো! যখন সত্যিকারের প্রেম হলো, তখন ছেলেদের প্রেম নামক ট্র্যাপে ফেলার দায় নিতে হলো মেয়েকে...যখন সন্তান জন্মেও চেহারায় মাতৃত্বের ছাপ পড়লো না, তখন যৌবন ধরে রেখে ছেলে পটাবার মন্ত্র শিখলো মেয়ে! স্বামী নামক অপদার্থের কাছে চরিত্রহীন আর প্রেমিক নামক প্রতারকের কাছে ৫০ বছরেও
একইরকম থাকার গৌরব পেলো মেয়ে...আবার কিছুদিনেই বিশ্বসুন্দরী ভাবার গৌরব আছে কিনা এমন মন্তব্যে দিনরাত গঞ্জনা শুনতে হলো মেয়েকে। যখন দিনরাত একবার দেখা পাবার আসায় চাতকের মতো চেয়ে থেকে বৃষ্টিহীন ফিরে গেলো, তখন এই সমাজ মেয়ের অনেক ভাব (এই সমাজের গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠিত মানুষের সংস্পর্শ পেয়ে ভাব)। আবার সমাজের বড় মানুষগুলো যখন ফিরে যায়, তখন শরীরী জাহাজ শক্ত ঘাটে নোঙর বাঁধঘার তকমা পায় মেয়ে। যখন এই সমাজে নিজেকে ভার্জিন দাবি করে, তখন এই সমাজের ভার্জিন জোর করে মেয়েকে পাবার নেশায় মত্ত হয়। সমাজের ভার্জিন অক্ষুণœ থাকে, কিন্তু মেয়ে পেয়ে যায় জেদিভাব আর পতিতার তকমা।
সৃষ্টির মহিমায় সৃষ্টিশীল সমাজ গড়ার দায় পায় সৃজনশীল সমাজ...মেয়ে পেয়ে যায় বহুজনে যাচে যেই জন সেইজন সেবিছে সমাজ। হায় রে মেয়ে! আর কতো? আর কবে পথের প্রান্তে লেখা থাকবে, মেয়ে নয়, মানুষ এই সমাজের সব মেয়ে? সে অবিবাহিত, বিবাহিত, ডিভোর্সি, সিঙ্গেল, মা বোন কিংবা পতিতাই হোক। সে মেয়েমানুষ নয়, শুধুই মানুষ...! তার সব কিছুতেই দোষ নেই। সব চলায় পাপ নেই...সেও বাঁচবে সব কিছুর উর্ধ্বে। সে জানবে, বেঁচে থাকাই নয়, সুস্থভাবে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচাই জীবনের জন্য বাঁচা?
আপনার মতামত লিখুন :