সাজিয়া আক্তার : সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধের একটি হিসেবে বিশ্বজুড়ে ধর্ষণ চিহ্নিত। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন রুখে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার নানারকম কঠোর আইনের ব্যবস্থা রেখেছে। এর মধ্যে কিছু দেশ সংশ্লিষ্ট আইন এবং তার প্রয়োগকে এতটাই নৃশংস ও ভীতিকর করে প্রণয়ন করেছে যেন এই হীন অপরাধ করে আর কোনো ব্যক্তি সাধারণ মানুষের সামনে গর্ব ভরে সমাজে চলাফেরা করতে না পারে। ধর্ষণের শাস্তির আইন নিচে দেয়া হলো। চ্যানেল আই
চীন : চীনে ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে কোনো টালবাহানা নেই। সেখানেই ধর্ষণের শাস্তি বলতেই সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে ধর্ষককে যৌনাঙ্গ কেটে দেয়া হয়।
ইরান : ইরানে সাধারণত ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কোনো ক্ষেত্রে যদি ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি অনুমতি দেন তবে অপরাধী মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পারে। তবে তখনো ধর্ষককে জনসম্মুখে একশ’ দোররা মারা হবে অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
নেদারল্যান্ডস : যে কোনো ধরনের যৌন নিপীড়ন, এমনকি অনুমতি ছাড়া জোর করে চুম্বন করাও নেদারল্যান্ডসে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এর শাস্তি হিসেবে অপরাধীকে বয়সের ওপর ভিত্তি করে ৪ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
ফ্রান্স : ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি অন্তত ১৫ বছরের কারাদণ্ড, সঙ্গে শারীরিক নির্যাতন। ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা বাড়িয়ে ৩০ বছর থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড পর্যন্তও করা হতে পারে।
আফগানিস্তান : আফগানিস্তানে ধর্ষণের শাস্তি রায়ের চার দিনের মধ্যে কার্যকর করা হয়। আর শাস্তিটি হলো ধর্ষকের মাথায় গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর।
উত্তর কোরিয়া : নর্থ কোরিয়া ধর্ষণের বিচার বা শাস্তির জন্য বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করে না। সেখানে ধর্ষককে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মাথায় গুলি করে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমকে ন্যায়বিচার দেয়া হয়।
রাশিয়া : রাশিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি কমপক্ষে ৩ বছরের কারাদণ্ড। ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা ৩০ বছর পর্যন্ত করা হতে পারে।
সৌদি আরব : সৌদি আরবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রায় ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জনসম্মুখে শিরশ্ছেদ করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত : সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের সাজা সরাসরি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড। এক্ষেত্রে কোনো ক্ষমা নেই, ধর্ষণ করলেই অপরাধ প্রমাণের ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পেতে হবে।
গ্রিস : গ্রিসে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার একমাত্র শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড।
ভারত : ২০১৩ সালে ধর্ষণবিরোধী আইন পাশের পর থেকে ভারত ধর্ষণের শাস্তি আগের চেয়ে আরো কঠোর করেছে। দেশটিতে ধর্ষককে সাজা হিসেবে ৭ বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে বিরল হলেও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ধর্ষককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নজির রয়েছে।
মিশর : মিশরে ধর্ষককে বরাবরই যে কোনো জনাকীর্ণ এলাকায় জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যেন অন্যরা সেটি দেখে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের আইন প্রচলিত –অঙ্গরাজ্য আইন এবং ফেডারেল আইন। ধর্ষণ মামলাটি ফেডারেল আইনের অধীনে পড়লে ধর্ষককে অর্থদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়ে থাকে। তবে অঙ্গরাজ্য আইনের অধীনে পড়লে সাজার প্রকৃতি নিশ্চিত নয়। কেননা দেশটির একেক অঙ্গরাজ্যে ধর্ষণের শাস্তি একেক রকম।
নরওয়ে : নরওয়েতে ধর্ষকের সাজা ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ক্ষতির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড।
ইসরায়েল : ইসরায়েলে ধর্ষক ব্যক্তি ন্যূনতম ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :