খোকন আহম্মেদ হীরা : দেশের তৃতীয় ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর’ দক্ষিণ উপকূলের মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে। বন্দর ঘিরে প্রকল্প এলাকায় চলছে বিরামহীন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন শত শত শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে পর্যটন শহর কলাপাড়া উপজেলা সদর হয়ে মানুষ যেতে পারছে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায়।
ভূমি অধিগ্রহণের পর এগিয়ে চলছে চার লেনের সংযোগ সড়কের কাজ। পূর্ণাঙ্গ পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য সাড়ে ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে তিন হাজার পরিবারকে জমি, স্থাপনা, গাছপালা-ঘরবাড়ির তিনগুণ মূল্য পরিশোধ ছাড়াও দেওয়া হচ্ছে উন্নত বসতি। জমি অধিগ্রহণের ফলে যারা বসতি হারিয়েছেন, সেই ধরণের সাড়ে তিন হাজার পরিবারের জন্য আধুনিক ও উন্নত বসতি নির্মাণ করে দিচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ।
পায়রা বন্দরের জমি অধিগ্রহণে বসতি হারানো সাড়ে তিন হাজার পরিবারের জন্য নির্মাণাধীন আধুনিক বসতিকে (টাউনশিপ) ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পুরস্কার’ বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুধু বসতি পুরস্কার নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর চার হাজার ২০০ নারী-পুরুষকে আত্মনির্ভরশীল করতে দেওয়া হচ্ছে ১৫৫ ধরনের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষিত অনেকেই এরইমধ্যে নির্মাণাধীন পায়রা বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নিজেদের নিয়োগ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের জমি অধিগ্রহণের ফলে গৃহহীন হওয়া বা হতে যাওয়া তিন হাজার ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ ৪৩৮একর জমিতে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে লালুয়া, উত্তর চান্দুপাড়া, দক্ষিণ চান্দুপাড়া, লেমুপাড়া, ধুলাসার এবং লোন্দা এলাকায় পৃথক ছয়টি আবাসন নির্মাণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি টাউনশিপ এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট স্কুল কাম কমিউনিটি সেন্টার কাম কমিউনিটি ক্লিনিক কাম শেল্টার স্টেশন, মার্কেট, মসজিদ, কবরস্থান, প্রতিটি আবাসনে দুটি খেলার মাঠ, দুটি করে পুকুর এবং হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের জন্য সুপরিসর উঠোন পাবেন বাসিন্দারা। থাকছে সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। প্রতিটি টাউনশিপে দুই ধরনের বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত যাদের ২০ শতকের ওপরে ভিটা-বাড়িসহ বসতঘর ছিলো, তারা পাচ্ছেন ‘এ’ টাইপ অর্থাৎ ৬.৫৭ শতক জমির ওপর ৭১৬ ঘণফুট আয়তনের পাকা বসতি এবং যারা ২০ শতকের কম ভিটা-বাড়িসহ বসতি হারিয়েছেন, তারা পাচ্ছেন ৪.৯৬ শতকের ওপর ৬৩২ ঘণফুট আয়তনের ‘বি’ টাইপের পাকা বাড়ি।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রতিটি একতলা পাকা বসতিতে থাকছে তিনটি বেড রুম, স্টোর রুম, কিচেনসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়াও প্রতিটি পরিবারের জন্য থাকছে সবজি চাষ এবং হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সুপরিসর পৃথক উঠোন। প্রায় আড়াই মাস আগে এ ছয়টি টাউনশিপের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে টাউনশিপ প্রকল্পের ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :