সৌরভ নূর : এখনো একটি মেয়ে এসএসসি পাস করলেই পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ক্রমাগত মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকেন মা-বাবাকে মেয়েকে ভালো পাত্রস্থ করে দেবার জন্য! আমাদের দেশে একটি মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেয়ে ভালো পাত্র পাওয়া বড় অর্জন, এই ধারণা হতে যতোদিন এই সমাজ বের হতে না পারবে, ততোদিন এই ঝরে পড়ার সংখ্যা কমবে না। কেবল মা-বাবার দোষ দিলেই হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্রও দায়ী। সমাজের নিরাপত্তাহীনতা হতে রক্ষা পেতেই বাবা-মা আগে মেয়েকে বিবাহ দেয়ার কাজটি সেরে ফেলতে চান। মাধ্যমিকে নারীরা এগিয়ে থাকলেও পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে পড়ছে কেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কারণ মেয়েদের দৌড় দেবার প্রতিযোগিতায় বাবা-মা, সমাজ, সংসার একটা সীমানা বেঁধে দেন, এই সীমানা পেরিয়ে যেতে পারে এমন মেয়ের সংখ্যা এখনো আমাদের দেশে কম। এখন মা-বাবারা অনেক সচেতন হচ্ছেন, মেয়েদের পড়াচ্ছেন। কিন্তু এই অংশটা এখনো খুব কম। যেদিন রাষ্ট্র মেয়েদের নিরাপত্তা দেবে, রাস্তা-ঘাটে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের পথে কোনো ধরনের যৌন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে পূর্ণ দৃষ্টি দেবে আইনশৃঙ্খলা, সেদিন বাবা-মায়েরা মেয়েদের আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহস পাবে।
এই সমাজ অন্যের মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবার জন্য যে তাড়া দেন, সেই তাড়া যদি তাদের বখে যাওয়া ছেলেদের দিতেন তাহলেও সমাজে মেয়েরা অনেকটা নিরাপদে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারতো। দ্বিতীয়ত. কলেজ গ্রামে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা। এটা সরকারের জন্য অনেক সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। কিন্তু যে হারে মেয়েরা মাধ্যমিক পর্যন্ত এগিয়ে যাচ্ছে, সে হারে উচ্চ মাধ্যমিকে এগিয়ে যেতে হলে প্রচুর কলেজ দরকার।
সব শেষে মেয়েদের নিজেদের শক্তি ও সাহস অর্জন করতে হবে এগিয়ে যাবার। এখনকার মেয়েরা গ্রামে এবং শহরে অনেক স্বাধীনচেতা, অনেক সচেতন, তারা যদি মা-বাবাকে ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হয় তাহলে তারা ঘরের বাধা অন্তত অতিক্রম করতে পারবে। তারপরও আমাদের সমাজ নুসরাতদের মেরে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে, তনুকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়, রিসাকে দিনে-দুপুরে রাজধানীর ব্যস্ততম জায়গা কাকরাইলে স্কুলের সামনে ছুরি দিয়ে খুন করে এগুলোই সত্য। এই সত্যকে মিথ্যা বানানতে এখন আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবেÑরাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারকে।
আপনার মতামত লিখুন :