ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নাটকীয়তা চলছেই। বৃহস্পতিবার নতুন করে আটজনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গণপদোন্নতিতেও প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে না পেরে ক্ষোভে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছেড়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি।
বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে সৈয়দ দিদার বখত, কাজী মামুনুর রশিদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আবদুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি ও এমরান হোসেন মিয়াকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেন এরশাদ। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ছয়জনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। এই ৮ জন নিয়ে দলটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫।
গণপদোন্নতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছেন নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি পদত্যাগের সত্যতা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, দল যেভাবে চলার কথা সেভাবে চলছে না। এ কারণে পদত্যাগ করেছি। অযোগ্যদের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে, যাদের দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা নেতৃত্বে চান না। এই এমপির দাবি, এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে 'এসব বিশৃঙ্খলা' চলছে জাপায়।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়লে দল থেকে পদত্যাগ করেননি লিয়াকত হোসেন খোকা। ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো এমপি যে দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছেন সেই দল থেকে পদত্যাগ করলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। লিয়াকত হোসেন সমকালকে বলেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়লেও আমি এখনো জাপার কর্মী। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এরশাদের সঙ্গে আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। এরশাদ আমার নেতা। এরশাদের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাব।
নারায়নগঞ্জের ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লিয়াকত হোসেন থোকা প্রথমবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়েছেন তিনি।
গত শনিবার মধ্যরাতে বারিধারার বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে তাদের সামনে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন এরশাদ। তখন বলেছিলেন, তার অসুস্থতার কারণে দলের দৈনন্দিন কাজের ক্ষতি হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, জাপায় দীর্ঘদিন ধরে চলা কথায় কথায় পদোন্নতি ও বহিষ্কারের রীতি বন্ধ করবেন। দলে যোগ দিয়েই আর কেউ প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে পারবেন না। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চান তিনি।
জিএম কাদেরের এ ঘোষণার চারদিনের মাথায় গণপদোন্নতির ঘটনা ঘটল জাপায়। এ বিষয়ে জানতে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মন্তব্য করেননি জাপার মহাসচিবসহ অন্য নেতারাও। তবে জাপা সূত্রের খবর, জিএম কাদেরের সম্মতিতেই এক সঙ্গে আটজনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে। যাদের অনেকেই ছিলেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। এক লাফে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে গেছেন।
গত ২১ মার্চ জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দেন এরশাদ। পরের দিন তাকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ সরিয়ে রওশন এরশাদকে এ পদে বসান এরশাদ। গত ৪ এপ্রিল রংপুরের নেতাদের চাপে কো-চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান জিএম কাদের। তবে উপনেতার পদে এখনো রওশন রয়েছেন।
জাপা সূত্রের খবর, জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় ক্ষুব্ধ রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। তাদের মোকাবেলায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন জিএম কাদের। তারই অংশ হিসেবে প্রেসিডিয়ামে আটজন নতুন সদস্য যোগ করা হয়েছে।
সূত্র : সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :