ইফতেখার সোহেল : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আলী। দাওয়াত খেয়ে রাতে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছেন। পান্থপথ দিয়ে যাওয়ার সময় রিকশা চালক একটা কাগজ দিয়ে বলে, স্যার, একটু দেখবেন ওষুধের নামটা কি? আলী সাহেব কাগজটি হাতে নিয়ে খুলে দেখেন প্রেসক্রিপশন। কিন্তু খুব ছোট করে লেখা। রাতে ভালো করে দেখতেও পাচ্ছিলেন না। কাগজটি ভালো করে দেখার জন্য মুখের কাছাকাছি এনে পড়ার চেষ্টা করেন। এরপর আলী সাহেব আর কিছু মনে নাই, নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করেন। পরে জানতে পারেন জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। পথচারীরা উনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। চিকিৎসা শেষে ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। পকেটে ভাইয়ের ফোন নম্বর থাকায় পরিবারের লোকজন আলী সাহেবকে খুঁজে পান। আলী সাহেব তার প্রিয় মোবাইল ফোন ও পকেটে থাকা টাকাপয়সা খোয়ান। শোভন নামের চট্টগ্রামের একভাইও ঠিক একই ঘটনার শিকার হন।
প্রকৌশলী সাইফুল্লাহ সাহেব অফিসের কাজে বাসে করে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন। বাসের মধ্যে পাশের এক ব্যক্তি পত্রিকা পড়ার ছেলে উনার মুখের সামনে পত্রিকাটা মেলে ধরে। এতে তাৎক্ষণিক ঝিমুনি আসে উনার। ২ দিন পর নিজেকে ঢাকা মেডিকেলের বিছানায় আবিষ্কার করেন। উনারও মোবাইল, পকেটে থাকা টাকাপয়সা খোয়া যায়। ২০১৪ সালের কথা, আমি গাজীপুর ফ্যাক্টরি থেকে আমাদের অ্যাডমিন অফিসারকে সাথে নিয়ে রাত পৌনে বারোটার দিকে বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম। রাত বেশি হওয়ায় বাসে যাত্রীও কম ছিলো। হঠাৎই বাসের সব লাইট অফ করে দিলো। কন্ডাক্টর মাথার উপরে থাকা ব্যাগ রাখার জায়গা থেকে ২টা বড় ছুড়ি বের করে একটা আমার বুকে ও অন্যটা আমার গলায় চেপে ধরে বলে যা আছে সব বের করে দেন। আরও বলে, চিল্লালে জবাই করে ফেলবে। আমার সাথের ভাইটিরও একই অবস্থা।
আমাদের মোবাইল, টাকাপয়সা নিয়ে ওর হাতের সমস্ত জোড় খাটিয়ে চোখে মলম লাগিয়ে দিলো। চোখের যন্ত্রণার কথা জীবণেও ভুলতে পারবো না। ১৫/২০ মিনিট পর একটা নির্জন জায়গায় এসে আবার চোখে মলম লাগিয়ে আমাদের ২ জনকে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। আল্লাহর মেহেরবানী পা পেচিয়ে চাকার তলে যাইনি। গভীর রাত, অন্ধের মতো দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার পাশে। অনেকক্ষণ পর এক ভদ্রলোক আমাদের পাশের এক বাসায় নিয়ে গিয়ে পানির ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই থেকে আমি ও সেই ভাই স্থায়ী চোখের সমস্যা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। এভাবেই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, সম্পদ হারানোর সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদের খপ্পরে পড়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :