শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি : বৈশাখের শেষ সপ্তাহে আগুনঝরা রোদে তেঁতে উঠেছে তীব্র গরম, কাঠফাটা রোদ ও লোডশেডিংয়ের কারণে খুলনা, যশোর, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।দহনে শুধু দক্ষিণাঞ্চল বাসীরই নয়, প্রাণ যায় যায় অবস্থায় বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণীকুল। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। বৈশাখী খরতাপ যেন আর কাটছেই না। আগুনঝরা আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। দিনে লু হাওয়া, রাতে গুমট গরমে নাভিশ্বাস উঠছে সবার। বৃষ্টির জন্য মানুষের মধ্যে যেনো হাহাকার পড়ে গেছে।সূর্য ওঠার পরপরই চড়চড় করে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহনীয় তাপদাহে গরম বাড়তে থাকে। এ অঞ্চলে এখন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এ অঞ্চলের দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ, কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সাধারণত ঘরের বাইরেই কাজ করতে হয় তাদের, কিন্তু, প্রচণ্ড তাপদাহে রোদের ভেতরে চলাফেরা করতেই কষ্ট হচ্ছে তাদের।
এরই মধ্যে বোরো ধান কাটার সময় চলে এসেছে। কিন্তু গরমের কারণে মাঠে থাকতে পারছেন না কৃষকরা। আবার সময়মতো ধান কাটতে না পারলে সামনে ঝড় বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন গৃহস্থরা।
তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলায় বাড়ছে লোডশেডিং। ফলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। শহরেও দিনরাত চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। তবে জেলা সদরের বাইরে একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহসাই আর ফেরে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূর্য দহনে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে চর্ম রোগির সংখ্যাও। এর মধ্যে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তীব্র রোদে পুড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি। প্রাণ হারাচ্ছে অনেক গাছ গাছালি।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দক্ষিণাঞ্চলে চলতি মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও সর্বনিম্ন ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনভর সূর্যের তীর্যক রশ্মী আর গরম হাওয়া, দুপুর থেকে শুরু হয় গরমের নাভিশ্বাস। আর দিনে রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে স্বস্তির জায়গা খুজে পাওয়া দুস্কর। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবের সময় এই তাপমাত্রা থেকে ২দিন প্রাণীকুল গরমহীন আরামে ছিল। তবে সেসময় ছিল উৎকন্ঠা। আর ফনী বিদায়ের সাথে সাথে এ অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে তাপমাত্রা। ভ্যাপসা গরমে নাস্তানাবুদ খুলনা, যশোর, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা।
এদিকে, সারাদিন তাপদাহে খাঁ খাঁ করছে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চল । মানুষের পাশাপাশি কাহিল পশু-পাখিরাও। মাঠ-ঘাট, বাসা কিংবা অফিস-আদালত কোথাও নেই স্বস্তি। অব্যাহত লোডশেডিং ও তাপমাত্রার কারণে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অব্যাহত এ তাপদাহের কারণে ইফতার আয়োজনে শরবত, ডাব, তরমুজ, বেলসহ রসালো ফলের চাহিদা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী ও কিছুটা সহনীয় মাত্রায় দাম থাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে আখের রস।
অন্যদিকে, সূর্যের তাপে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। অব্যাহত তাপপ্রবাহেবাগেরহাট খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পৌঁছেছে। আর অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকোপ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ¦র, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সূত্র মতে, ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হয়। এরমধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন থেকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে এতবছর পর আবারও সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সবাই।
আবহওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপ প্রবাহের পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিই এই অতিরিক্ত গরমের অন্যতম কারণ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপদাহ চলছে। খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে আরও ৩/৪ দিন এই অবস্থা থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) খুলনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, এদিন কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল পাশাপাশি অন্যান্য জেলাগুলোতেও।খুলনা শিশু হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল আমিন জাকির জানান, বৃহস্পতিবার (৯ মে) ডায়রিয়া আক্রান্ত ৩০ শিশুডায়রিয়া রোগীও ৮ মে ২০ শিশু ভর্তি হয়। তীব্র গরমের কারণেই পানিশূন্যতা তৈরি হওয়ায় এরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি জানান, বৃহস্পতিবার (৯ মে) ডায়রিয়া ৩০ শিশু সহ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত৩শিশু ভর্তি হয়ও ৮ মে ২০ ৩০ শিশু সহ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত ২শিশু ভর্তি হয়। তীব্র গরমের কারণেই পানিশূন্যতা তৈরি হওয়ায় এরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।বাগেরহাট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান, এই গরমে বেশিক্ষণ খোলা স্থানে থাকলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। ভ্যাপসা গরমে দেহ থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। এ কারণে বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
রিকশাভ্যান চালক নুরুল আমিন বলেন, তীব্র গরমে সারাদিন খাটুনির পর রাতের ঘুমও ঠিকমত হচ্ছে না। তারপরেও জীবিকার তাগিতে এই রোদে রাস্তায় বের হতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমন গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। তারা নিউমোনিয়া, পাতলা পায়খানা, আমাশয়, জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি হয়। সে কারণে এই ধরনের রোগ বেশি হয়ে থাকে। রোদে বেশি ঘোরাঘুরি না করার এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এবিষয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা: জি, কে, এম শামসুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত গরমে রোগবালাই কিছুটা বেড়ে যায়। হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি হয়। সে কারণে এই ধরনের রোগ বেশি হয়ে থাকে। রোদে বেশি ঘোরাঘুরি না করার এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।