শিরোনাম
◈ গ্যাসের জন্য ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছি, তারপরও জ্বি স্যার, জ্বি স্যার বলতে হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ◈ ‘দেখি বাসে আগুন জ্বলছে, আমরা কয়েকজন মিলে পোড়া মরদেহ নিচে নামাই’ ◈ বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল ৩ বছরে দুই-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি ◈ জাতীয় ক্রিকেট লিগ, নাইম শেখের দাপুটে ইনিংসে  ঢাকা মেট্রোর দারুণ শুরু ◈ টেস্ট ক্রিকেটে জয়সোয়ালের ছক্কার রেকর্ড ◈ জাতীয় ক্রিকেট লিগের টি-টোয়েন্টি ১১ ডিসেম্বর শুরু ◈ জয়সোয়াল ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে পার্থ টেস্ট ভারতের নিয়ন্ত্রণে ◈ বেনাপোল রুটে অনিদিষ্টকালের দূরপাল্লার বাস ধর্মঘট ◈ কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না নয় : আইজিপি ◈ গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো ১০ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ০৮ মে, ২০১৯, ০৫:৫৩ সকাল
আপডেট : ০৮ মে, ২০১৯, ০৫:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কবিগুরু আমাদের প্রতি মুর্হূতের প্রতি দিবসের

রিপন আহসান ঋতু : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমগ্র জীবনের সাধনার মূলে ছিল মানবতার জয়গান। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়য়ের উর্ধ্বে তিনি স্থান দিয়েছেন মানুষকে, মানবতা। বলেছেন, ‘মানবকে মহান বলো জেনো।’ এই মানব সর্বকালের- ধর্ম, জাতি, দেশ, কালের সীমা ছাড়িয়ে ‘অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস।’ মানুষের এই বাসস্থান অর্থাৎ দেশকে তিনি মানুষে মানুষে মিলিয়ে জ্ঞানে, কর্মে সৃজন করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনা-দর্শন তাই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন এক বিস্ময়কর আধুনিক মানুষ তাঁর নোবেল প্রাপ্তি পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবার অলক্ষে তিনি ধীরে ধীরে বাঙালিসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। সংস্কৃতি শব্দটির যে বোধিগ্রাহ্য রূপ, গভীরতা ও ব্যাপকতা তা স্মরণে রেখেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে একথা বলা চলে। দু-চার দশক নয়, এক শতাব্দীও নয়- তাঁর জন্মের দেড়শ বছর পেরিয়ে গেছে সেই কবেই। দীর্ঘ সময় পরিক্রমায় ম্লান হয়ে গেছে কত কিছু! পাল্টে গেছে মানচিত্র, জন্ম নিয়েছে নতুন দেশ। কিন্তু জন্মের দেড়শ বছর পেরিয়েও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেদীপ্যমান। অন্ধকার যতই আসুক, তাঁর আলোর কাছে তা ম্লান। ধ্রুপদী এই আলো পথ দেখায়, এগিয়ে নিয়ে যায়। কবিগুরু তাই প্রতিমুর্হূতের, প্রতিদিবসের। আর বিশেষ দিবস হলে তো কথাই নেই। তখন রবির আলোয় রাঙা হয়ে ওঠে চারদিক। ‘‘প্রভাতের রৌদ্র লেখা লিপিখানি/ হাতে করে আনি/ দ্বারে আসি দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ’’- নিজের জন্মদিন নিয়ে এভাবেই কাব্য সাজিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রৌদ্রখরতার পঁচিশে বৈশাখে সাহিত্য গগণের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী। কবিতা ও গানে তিনি আজীবন প্রেম, প্রকৃতি ও মানবতার বন্দনা করে গেছেন। সব জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে-মুছে সবসময় তারুণ্য ও নতুনের জয়গান গাইতেন তিনি। ১৮৬১ সালের (১২৬৮ বঙ্গাব্দ) আজকের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্দশ সন্তান। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃবিয়োগ ঘটে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশে তিনি ইংল্যান্ড যান। সেখানে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে নদীয়া, পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন।

ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনাই তাঁর সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে কবিপতœী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এর পর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়ে রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। এতো এতো সংকটেও তিনি হোঁচট খাননি, বরং কীর্তিময় জীবনে সাহিত্য-সংস্কৃতির বাইরেও তার গতিময় জীবনের দেখা পাওয়া যায়। সাংগঠনিক কাজ ও সামাজিক উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী। কৃষক ও পল্লী উন্নয়নের কথা ভেবে তিনি চালু করেছিলেন কৃষিঋণ-ব্যবস্থা। শিক্ষা নিয়ে ভেবেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তান আমলে সরকারিভাবে রবীন্দ্রনাথকে বেতারে ও টিভিতে নিষিদ্ধ করা হলেও বাঙালির মননে ও চেতনে তিনি প্রবল প্রতাপেই রাজত্ব করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণাস্বরূপ। বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। ৩২ খ-ে প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলিতে তার সাহিত্যকর্ম সংকলিত হয়েছে। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১ হাজার ৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথের মোট গানের সংখ্যা কেউ বলেছেন ২২২৫টি আবার কেউ বলেছেন ২২৩২টি। রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিসমূহ সাহিত্যমূল্যে অনবদ্য। এগুলো বাংলা পত্রসাহিত্যের সম্পদ। এগুলো আলাদাভাবে গ্রন্থভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার রচনাবলি অনূদিত হয়েছে। তিনি নিজের লেখা অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনেতা হিসেবেও তিনি প্রশংসা পেয়েছেন। তিনি একজন সুগায়কও ছিলেন। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের ঊর্ধ্ব সোপানে। ১৯১০ সালে রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি নিয়ে আসেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ভারতীয় চিত্রকলাকে আধুনিকতার ধারণায় উর্বর করেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দিতে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে তিনি এ উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯০১ সালে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও এর অনেক আগেই শিলাইদহের জমিদারিতে তিনি কৃষকের উন্নয়নের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। তিনি প্রায় সারাবিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে মানবতার বাণী প্রচার করেছেন। রাজপথে নেমে আসেন তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে। এভাবে বার বার সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতার ঘোষণা দিয়েছেন সমাজসচেতন রবীন্দ্রনাথ। তিনি পৃথিবীর একমাত্র গীতিকবি- যার রচিত ভিন্ন তিনটি সঙ্গীত ভিন্ন তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গীত হয়। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশে, ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতে এবং ‘নমো নমো মাতা’ শ্রীলংকার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংগঠক

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়