উত্তমকুমার রায় : রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের এক বিস্ময়কর প্রতিভা । সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো দিক নেই যে তার আলোকে হয়নি আলোকিত । রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা খ- থেকে অখ-ে, সসীম থেকে অসীমে এবং ব্যক্তিজীবন থকে বিশ্বজীবনে উত্তরণ ঘটেছে । সাহিত্য-সংস্কৃতিজগতের তিনি কল্পতরু । তিনি বিশ্বকবি, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব । দাবির পক্ষে যুক্তিসমূহ —
১. এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ২. বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গীতিকবি তিনি । ৩. সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখায় তার অবাধ বিচরণ । যেমন- কবিতা, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, চলচ্চিত্র, চিত্রশিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য, শিক্ষা, কৃষি (সমবায়), চিকিৎসা (হোমিওপ্যাথ ), অভিনয় প্রভৃতি । অর্থাৎ তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতিজগতের কল্পতরু ।
৪. তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে একটি স্বতন্ত্র বিশ্বজনীন ধারার জন্ম দিয়েছেন । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ধারার সমন্বয় সাধন করেছেন । আর তাই রবীন্দ্রসঙ্গীতের শুধু প্রাচ্যেই নয় পাশ্চাত্যেও রয়েছে সমান কদর । ৫. প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ রবীন্দ্রনাথের একটি স্বতন্ত্র ভাবনা । তাঁরই একান্ত ভাবনায় ও উদ্যোগে শান্তিনিকেতনের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রুথম প্রতিষ্ঠিত হয় । এটি বর্তমানে একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় । ৬. তার আঁকা ছবি বিশ্বের অমূল্য সম্পদ । বিশ্বে বহুল প্রশংসিত । ৭. সর্বাধিক বিশ্বভ্রমণ ও ভ্রমণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে তার অনেক বেশি । ৮. তার নৃত্যনাট্যগুলো অসাধারণ । তাতে রয়েছে চলচ্চিত্রের প্রভাব । ৯. দেড়শো বছর পরেও তার চিন্তাচেতনায়, রচনায় আধুনিকতার ছোঁয়া বিদ্যমান ।
১০. সঙ্গীতের তালে বেশ কিছু নতুন তাল তিনি সৃষ্টি করেছেন । ১১. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের পর যখন ভারতবর্ষের মানুষ ইংরেজদের ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল সেই সময় তিনি একাই এ নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি পরিত্যাগ করেছিলেন । দুর্দিনে তখন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন । ১২. কৃষিক্ষেত্রে তার সমবায়-ভাবনা প্রশংসনীয় । ১৩. তার ‘গল্পগুচ্ছ’ বিশ্বনন্দিত । ১৪. জমিদার হয়েও প্রজাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেননি । প্রজাবৎসল হিসেবে তার সুখ্যাতি আছে । ১৫. তার রচিত গান তিনটে দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতরূপে গৃহীত হয়েছে । ১৬. তিনি বাংলাভাষা ও ভারতবর্ষকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন । ভারতবর্ষের বিচিত্র/বহুত্বের মাঝে তিনি ঐক্য স্থাপন করেছেন । ১৭. একের পর এক অসংখ্য আপনজনের মৃত্যু বিশ্বের ইতিহাসে বিরল । এতো শোকেও তিনি ভেঙে পড়েননি । ১৮. তার শিক্ষাভাবনা প্রশংসনীয় ।
সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তিনি মানুষের অন্তরের কথা ও ব্যথা তার রচনায় চমৎকারভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন । দেড়শো বছর পরেও তার লেখার গুরুত্ব কমেনি, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে । বিশ্বের এক বিরল প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ । যতোদিন বাংলাভাষা হবে প্রবাহমান ততোদিন তিনি থাকবেন মানুষের অন্তরে । এসব দিক বিবেচনা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সংস্কৃতির মানব ঐক্যদিবস ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি ।
আপনার মতামত লিখুন :