মাসুদ-উর রহমান : ৬ মে প্রকাশিত হলো এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। যারা উত্তীর্ণ হয়েছো তাদের অভিনন্দন! যারা উত্তীর্ণ হওনি তাদেরও আসলে মন খারাপ করার কিছু নেই। ভালো করে পড়ো, আগামীতে অবশ্যই উত্তীর্ণ হবে। শুভকামনা তোমাদের জন্য। ১৯৯২ সালেও এমনটি হয়েছিলো তবে আজকের মতো ফেসবুকে এতো অভিনন্দনের জোয়ার বইবার সুযোগ ছিলো না। ভাগ্যিস ছিলো না। কেননা সেই রেজাল্ট এতোই বেশি চমকপ্রদ ছিলো যে ফেসবুক থাকলে এলাহি কা- ঘটে যেতো।
একটি ঘটনা বলছি-পরীক্ষার্থী ছিলো আমার মামা সম্পর্কের। মেট্টিক পাসের একটা সনদ তার খুব প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু নিজের ওপর বলভরসা কম থাকায় রেজাল্ট নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলো। তো যথারীতি ফলপ্রকাশের পরেরদিন শহরে গেলো রেজাল্ট জানার জন্য। এখনকার মতো স্কুলে রেজাল্ট আসতো না,পাস-ফেলদের রোল নম্বর পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। একটা পত্রিকা কিনে দুরুদুরু বক্ষে থার্ড ডিভিশন প্রাপ্তদের রোল গুলোতে চোখ বুলালো। সেখানে রোল না পেয়ে হতাশ হলো। শেষে অন্যজনের প্ররোচনায় সেকেন্ড ডিভিশন প্রাপ্তদের তালিকায় চোখ বুলিয়েও যখন কাক্সিক্ষত রোল খুঁজে পেলো না তখন পূর্বোক্ত পরিকল্পনা অনুসারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেমে পড়লো। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে রাত অবধি ওনার কোনো খোঁজ মিললো না। অনুমিত ঘটনায় বাড়ির অন্যরাও তেমন একট ঘা করলো না। রাতে বাড়িতে একজন খবর নিয়ে এলো সে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে। কিন্তু রেজাল্টধারী এ খবর জানে না, জানানোর সুযোগও নেই। এ-কান, ও-কান হয়ে পরদিন রেজাল্টধারীর কানে পৌঁছানোর পর তবেই বাড়ি ফিরলো।
একবছর আগে আমাদের সময় পুরো উপজেলায় যতন ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলো সেবার আমাদের স্কুল থেকেই ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলো তার চাইতে বেশি! কারণ কি? কারণ আর কিছুই না, সেটা হলো অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে সববিষয়ে ৫০ নম্বরের নির্ধারিত এমসিকিউ চালু। তখন রিটেন টেস্টে শূন্য পেয়েও কেবল এমসিকিউ তে পাস করলেই পাস হয়ে যেতো। যেহেতু এমসিকিউ নির্ধারিত ছিলো তাই পরীক্ষার দিন সকালে সোগুলোতো চোখ বুলালেই হয়ে যেতো। সেই এমসিকিউ ভূত এতোদিন পর কমাতে কমাতে এখন বাদ দিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
তো সেই রেজাল্টের চমৎকারিত্বের কিন্তু শেষ হয়নি বরং শুরু হলো। পাশ করা বিপুল শিক্ষার্থী যখন কলেজে ভর্তি হতে গেলো তখন কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত- সর্বনাশ! এতো আসন তো আমাদের কলেজগুলোতে নেই। কী আর করা? হুজুগে বাঙালি সুযোগ পেয়ে গেলো। ব্যতিক্রম বাদে শিক্ষাবণিকরা লুঙ্গি কাছ মেরে এ কাজে নেমে পড়লেন। চারদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠার হিরিক পড়ে গেলো। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এইসব কলেজ কর্তৃপক্ষে গাফিলতিতে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এমপিওভুক্তও হয়ে গেল। ব্যস আর যায় কোথায়- শিক্ষাবণিকরা তখন সরকারের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে সেই এমপিওর অনুদান বিভিন্ন কায়দায় তছরূপ করার মচ্ছবে মেতে ওঠলো। দেশের আনাচে কানাচে এমপিওভুক্ত এমনসব প্রতিষ্ঠানের খবর আসতে থাকলো যেগুলোর বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এমন টাইট দিলো যে পাশের হার নেমে এলো বিশ-ত্রিশ এর ঘরে। রাতারাতি সেইসব কলেজ শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে গেলো। সরকারের টনক নড়লো-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হতে থাকলো শিক্ষক ত্রিশজন ছাত্র দুজন! ইত্যাদি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে অপ্রয়োজনীয় স্কুল কলেজ ছাটাই করার কর্মসূচি হাতে নিলো। শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের হার বেঁধে দেওয়া হলো- না হলে এমপিও ঘ্যাচাং! সর্বনাশ! এমপিও বাঁচাও এবং তখনি সেই তখনি শুরু হয়ে গেলো পাসের হার বাড়াতে নানা অনিয়ম- দুর্নীতির...! যা আজও চলছে বলেই মনে হচ্ছে। এই হলো আমাদের শিক্ষার সাতকাহন!
এতোক্ষণ যা লিখলাম তা ওই হুজুগে বাঙালির সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটি আবার মনে করিয়ে দিতে। আমরা সবাই জানি বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বশেষ শিক্ষা সনদকে মাস্টার্সের সমতুল্য ঘোষণা করেছে। এরপর কী হচ্ছে- সেটি কী সরকারের নজরে আসছে? শহরের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো মাদ্রাসা গজিয়ে ওঠছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে মাত্র দুইশত মিটার ব্যাসার্ধে মাদ্রাসার সংখ্যা ১৮ টি বা তারও বেশি! না, যেখানে স্বয়ং সরকার মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে আমার কোনো সংশয় বা সন্দেহ নেই এবং আমি এর বিরুদ্ধাচরণও করছি না। আমার জিজ্ঞাসা একটিই- সেটি একসময় না আবার স্কুল- কলেজের মতো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :