আহমেদ শাহেদ : শেরপুরের নকলায় উপজেলার শত শত পরিবারের জীবন জীবীকার একমাত্র অবলম্বন বাঁশের তৈরী পণ্য। উপজেলার চন্দ্রকোনা, নারায়ণখোলা, চরকৈয়া, মমিনাকান্দা, বারমাইসা, ছত্রকোনা, বাউসা, মোজার, চিথলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক পরিবার এ পেশায় জড়িত।
এ পেশোতেই চলে তাদের জীবন জীবীকা। নারায়ণখোলার একটি এলাকার প্রায় সব পরিবার এ পেশার সাথে যুক্ত থাকায় এলাকাটি সবার কাছে বেপাড়িপাড়া হিসেবে পরিচিত।
শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি শিক্ষার্থীরাও এসব পেশায় জড়িত।
বাঁশ দিয়ে ডালা, কুলা, চালনি, পানডালা, মাছ ধরার ঝুড়ি, চাটাই, খেলনা, ধান মজুদের ডুলি, ধান রাখার গোলা, মাচা, বিভিন্ন সাইজের খাঁচাসহ গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য ও দৈনন্দিন কাজের নানা রকমের জিনিস তৈরী করেন। এসব বিক্রি করে চলে তাদের ছেলে মেয়ের লেখা-পড়া ও সংসার খরচ।
নানান প্রতিকূলতার মাঝেও ধার-দেনায় পুঁজি খাটিয়ে বাপ-দাদার এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন নকলা উপজেলার শত শত কারিগর। তাদের তৈরী পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের সরবরাহ করা হয়। ঢাকা সহ সারা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় বা জেলা সদরের পাইকাররা এখান থেকে বাঁশের তৈরী পণ্য কিনে নেন।
স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের দিন একহাজার টাকা থেকে একহাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য দিন পাড়া ঘুরে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার বাঁশ পণ্য বিক্রি করতে পারেন খুচরা বিক্রেতারা। তাতে প্রতিজনের গড়ে প্রতিদিন লাভ থাকে প্রায় ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। এ অল্প টাকাতেই ছেলে মেয়ের শিক্ষা খরচ সহ সংসারের খরচ মেটাতে হয় তাদের।
এ শিল্প সঙ্গে জরিতদের মধ্যে নান্টু চন্দ্র বিশ্বাস, জগদীস চন্দ্র বিশ্বাস সহ অনেকেই নিজের মত করে বলেন “আংগরে টেহা পয়সা কম তাই বেশি কইরা বাঁশ কিনাবার পাইনা। ছোডো একটা ঘরছাড়া আর কিছুই নাই। সরকার যদি ব্যাংক থাইক্কা আংগরে ঋণ দেওনের ব্যবস্থা করত তাইলে আমরা মেলা কিছু করবার পাইতাম। সরকারেরও লাভ অইত।”
তারা আরো জানান সরকার তাদের সহজ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে নিয়মিত কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংকিং খাতেও সুনাম অর্জন করতে পারবেন। অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করা গেলে তাদের কাজের গতি বেড়ে যাবে এবং শ্রমের অপচয় হবেনা।
ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশীদার হতে পারবেন বলে জানান সুধীজনরা। তবে ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্যের ভীড়ে ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। দিন দিন কমছে বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িতদের সংখ্যা। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, তাছাড়া প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. তানজিল আহমেদ চৌধুরী জানান, বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রী এটুআই কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রান্তিক ক্ষুদ্র জনগোষ্টির জীবন মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতি মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, বাঁশ ঝাড় বা যেকোন বাঁশ বেশি পুরাতন হয়ে গেলে প্রকৃতি গত কারনেই মারা যায়। পুরাতন বাঁশ দ্বারা কৃষি পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করণের মাধ্যমে উপজেলার অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে অত্যধুনিক বা প্লাস্টিক পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশ শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে। বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং ঘর বাড়ীকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ীর আঙ্গীনার পতিত জমিতে বাঁশ রোপন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ।
আপনার মতামত লিখুন :