স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপ মিশনে গতকাল আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছে মাশরাফি বাহিনী। বিশ্বকাপ শুরুর আগে কণ্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে তিনজাতি একটা সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। আড়াই মাসের লম্বা এই সফরে যাওয়ার আগে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন মাশরাফিরা। গণভবনে সেই আড্ডার শেষদিকে বেশ খানিকটা হাসিঠাট্টাও হলো। একদমই আউট অফ দ্য সিলেবাস, মাশরাফি হঠাৎ বলে বসলেন, আপা এইবার ওয়ার্ল্ডকাপে যাওয়ার আগে আমাদের ৫/৬ জন বিয়ে করে যাচ্ছে! শেখ হাসিনা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বৌ নিয়ে যাচ্ছে না কেন?’
মাশরাফি- আপা ভিসা করানোর সময় পায়নাই মনে হয়!
প্রধানমন্ত্রী- বৌ সাথে নিয়ে গেলেই তো হয়।
মাশরাফি- বলছিলাম আপা, কিন্তু অনুষ্ঠান পরে করবে তো…
প্রধানমন্ত্রী- অনুষ্ঠান করার দরকারটা কী, অনুষ্ঠান এসে করা যাবে। সাথে থাকলে অনুপ্রেরণা পেতো। ইন্টারন্যাশনাল নিয়মটা কি?
নাজমুল হাসান পাপন – আপা, এই জায়গায় আমি বকা দিয়েছি। মিরাজ আমাকে ফোন দিয়েছিল দাওয়াত দিতে, আমি ফোন ধরিনাই। তাসকিনকে দিছি বকা। এই এক মাস পর বিশ্বকাপ তোমরা কি শুরু…
মাঝখান থেকে বিসিবি সভাপতির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মাশরাফি বললেন, ‘তাসকিনের তো ছেলে হইয়া গেছে…!’ (নাজমুল হাসান পাপন ভুল করে মুস্তাফিজের জায়গায় তাসকিনের নাম বলে ফেলেছিলেন)
গতকালের আড্ডায় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষাতেই বলেছেন, ‘জিততেই হবে’ এরকম কোন চাপ নেয়ার দরকার নেই, খেলাটাকে উপভোগ করলেই হলো। শেষদিকে ফিনিশিঙে বাংলাদেশ দলের চিরাচরিত দুর্বলতার কথাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী, বলেছেন, বেশি উত্তেজিত হওয়ার কোন দরকার নেই। প্রতিটা ম্যাচেই কেউ ভালো খেলবে না, প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই হবে।
এই সহজ কথাটাই আমাদের দেশের অনেক মানুষ বুঝতে পারে না, অথচ তারা নিজেদের ‘ক্রিকেট ভক্ত’ বলে দাবী করে! জাতীয় দলের জার্সি গায়ে যে এগারোজন মাঠে নামে, এদেত কেউই হেরে ড্রেসিংরুমে ফিরতে চায় না, সবাই চায় নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে জেতাতে। প্রতিদিন সেটা সম্ভব হয় না। কোনদিন প্রতিপক্ষ বেশি ভালো খেলে ফেলে, কোনদিন হয়তো কণ্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না, আবার কোনদিন হয়তো নিজের সেরা খেলাটা বেরিয়ে আসে না।
‘জিতলে আছি, হারলে নাই’ মানসিকতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই লোকগুলোই দল হেরে যাওয়ার পরে খেলোয়াড়দের কাঠগড়ায় তোলে, একেকজনের একেক কোটা খুঁজে বের করে। এই বিশ্বকাপে যদি পারফরম্যান্সে একটু উনিশ বিশ হয়, আমি নিশ্চিত, সৌম্য, লিটন বা এরকম আরও কয়েকজনকে টার্গেট করা হবে খুব বাজেভাবে। গালিগালাজ দিয়ে একাকার করে ফেলা হবে। নিন্দা করার জন্যে সুযোগের অপেক্ষায় ছুরিতে শাণ দিয়ে রাখা মানুষের তো অভাব নেই চারপাশে।
আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট খেলাটা খুব ভালো বোঝেন না, ক্রিকেটীয় নিয়মকানুন বা পরিসংখ্যান সম্পর্কেও তার নিখুঁত ধারণা হয়তো নেই। বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের বাইরে খুব বেশি ক্রিকেটারকে তিনি হয়তো চেনেনও না। কিন্ত তিনি জানেন, প্রতিটা ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা কারো পক্ষে সম্ভব না, তিনি এটুকু বোঝেন, বাংলাদেশ এখনও প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতার মতো দল হয়ে ওঠেনি।
তাই তিনি দলকে বিদায় দেয়ার আগে বলে দেন, চাপ নিতে হবে না, খেলাটাকে উপভোগ করতে হবে। ক্রিকেট খুব ভালোভাবে না বুঝলেও, এটুকু তিনি বোঝেন, মাথার ওপর থেকে চাপটা সরে গেলে ছেলেগুলো ভালো খেলতে পারবে। আমাদের অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা যদি ক্রিকেটীয় বাস্তবতাটুকু প্রধানমন্ত্রীর মতো বুঝতেন, তাহলেও কত ভালো হতো!
নানা বিতর্কে বিশ্বকাপের আগে জর্জরিত দল। জার্সি বিতর্ক, মাশরাফি বনাম ডাক্তার সমাজ বিতর্ক, জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাকিবের না থাকা বিতর্ক- সবকিছুর মাঝে দেশ ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাটানো সময়টুকু ক্রিকেটারদের জন্যে টনিক হিসেবে কাজ করবে নিশ্চয়ই। দেশের প্রধান ব্যক্তিটি যখন ক্রিকেটারদের ভরসার কেন্দ্রস্থল হিসেবে আবির্ভূত হন, তখন মাথার ওপরের সব কালো মেঘ সরে যাওয়ারই তো কথা! সূত্র : এগিয়ে চলো.কম ম্যাগাজিন থেকে
আপনার মতামত লিখুন :