সুজন কৈরী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। ‘আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদান’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি এই ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এম.এ ও এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি এম.বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন।
বৃহস্পতিবার র্যাব সর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগ থেকে এবং বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর শিবলী রুবায়েত উল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ডিবিএ প্রথম ব্যাচের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে (রেজি নং-১৩/২০১৪-২০১৫) বেনজীর ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণা মূলত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বেনজীর আহমেদ তার অভিসন্দর্ভে জাতীয় অর্থনীতিতে পুলিশ শান্তিরক্ষীদের অবদান এবং শান্তিরক্ষা মিশনসমূহ প্রায় তিন দশক দায়িত্ব পালন লব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের পুলিশ সংগঠনে ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ভ‚মিকা পালন করেছে সেটি তুলে আনার চেষ্টা করেছন।
বেনজীর আহমেদ পেশাগত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ (এপিসিএসএস), অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটি এবং সিঙ্গাপুরে বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৮ সালে বেনজীর আহমেদ সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। বর্তমান দায়িত্বের আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেনজীর একাধিকবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগে চিফ অব মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরেও গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতায় তিনি আইজিপির এক্সজাম্পলারি গুড সার্ভিস, তিনবার জাতিসংঘ শান্তি পদক প্রাপ্ত হন। এছাড়া তিনি সরকার কর্তৃক সর্বমোট পাঁচবার পেশাগত সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেলে (বিপিএম) ভূষিত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গবেষণায় বেনজির আহমেদ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যগণ বিশ্বশান্তিরক্ষায় অনন্য অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং শান্তিরক্ষীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় অর্জনে শান্তিরক্ষা মিশন এর ভ‚মিকা অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। তার গবেষণার প্রথমভাগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সেবার মান অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের উপর প্রভাব উদঘাটন করেছেন।
দ্বিতীয়ভাগে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত সততা চর্চার ফলে দূর্নীতি প্রতিরোধে ইতিবাচক সহায়ক ভ‚মিকার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। পুলিশের সেবার মান সম্পর্কে মানুষের ধারণা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত সততা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সাথে দূর্নীতির সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের ফলে প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ গুণগত এবং পরিমাণগত এই দুই দিক থেকেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশি সৈনিক এবং পুলিশ সদস্যদের নিকট শান্তিরক্ষা মিশন একটি লাভজনক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের অর্জিত আয় প্রধানত জমি ক্রয় এবং দ্বিতীয়ত ব্যাংকে সঞ্চয়ের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বলে তিনি তার গবেষণাপত্রে উপস্থাপন করেছেন।
দীর্ঘ গবেষণালব্ধ এই অর্জনের জন্য বেনজির আহমেদ তার সুপার ভাইজার বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর শিবলী রুবায়েত উল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও উক্ত বিভাগের অন্যান্য সকল শিক্ষকবৃন্দ ও বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাবের সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই গবেষণাকর্মে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য তিনি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :