শেখ নাঈমা জাবীন : পদত্যাগ করেছেন মামুনুর রশীদ, মতিন রহমান, মোরশেদুল ইসলাম ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রজ্ঞাপন জারি করার অভিযোগ তুলে ২৮ এপ্রিল পদত্যাগ করেন তারা।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলো তথ্য মন্ত্রণালয়। তথ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কায়সার আলম স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখানে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই। একই বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত ছিলো অনুদানের জন্য চ‚ড়ান্ত হওয়াদের মধ্যে একজন সারাহ বেগম কবরীর তির্যক মন্তব্যও। তার ভাষায়, ‘প্রজ্ঞাপন জারির পর যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো।’
বুধবার বিকেলে পাঠানো তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি সারাহ বেগম কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী ড. ইনামুল হকের ‘১৯৭১-সেইসব দিন’ নামের দুটি চলচ্চিত্রের বিষয়ে ১১ সদস্যের অনুদান কমিটির ৪ জন সদস্য অজানা কারণে ক্রমাগতভাবে অসম্মতি প্রকাশ করে আসছিলেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনে দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের অবদান রাখার সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশকৃত সবক’টি চলচ্চিত্রের সাথে উল্লিখিত দু’টি চলচ্চিত্রকেও অনুদানের আওতায় আনা হয়, যার সাথে অনুদান কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সহমত পোষণ করেছেন। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই।’
এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী-নির্মাতা সারাহ বেগম কবরী ও অভিনেতা ড. ইনামুল হকের বক্তব্য সংযোজন করে সাংবাদিকদের দফতরে পাঠান তথ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কায়সার আলম।
কবরী বলেন, ‘অনুদানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সঠিক। বিগত দিনেও দেখেছি, এসব জায়গায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে কয়েকজন লোক। সব সময় তারাই ভালো নির্মাতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। যারা এগুলো করেন, তাদের উদ্দেশ্য সব সময় অসৎ। তবে মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল এদের চিহ্নিত করে আগেই বাদ দেওয়া। প্রজ্ঞাপন জারির পর যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তাদের এখন পদত্যাগ করা বা না করা একই কথা। সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ হওয়ার পর পদত্যাগ করতে চাওয়ায় বোঝা যায় যে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।
এদিকে ড. ইনামুল হক বলেন, ‘আগেও আমার এই চিত্রনাট্যটি জমা দেওয়া হয়েছিল। অনবরত আমার চিত্রনাট্য অনুদান-অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে কেন, তা বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই ঈর্ষাকাতর হয়ে এমনটি করা হচ্ছে। কারও যদি আপত্তি থাকতো, তাহলে মন্ত্রীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারতেন। বলতে পারতেন, আপনার সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ হয়নি। চিত্রনাট্য নিয়ে আপত্তির সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ কেউ দেখাতে পারেননি। যাদের চিত্রনাট্য নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তারা ফেলনা কেউ নন। চলচ্চিত্র ও নাটকেই তাদের পুরোটা জীবন কেটেছে। সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক কোনও সুবিধা আমি নিইনি।’
তবে এই অনুদানে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে গত ২৮ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন কমিটির সদস্য বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, খ্যাতিমান নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম ও মতিন রহমান। তাদের পদত্যাগপত্রটি ছিল এমন-
‘৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে আপনার (তথ্যমন্ত্রী) সভাপতিত্বে এবং সচিব মহোদয়ের উপস্থিতিতে ২০১৮-১৯ সালের জন্য গঠিত চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সভায় ২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ও একটি শিশুতোষসহ ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, অনুদান কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে সম্পূর্ণভাবে মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে সেই সভার সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের আগেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে কিন্তু এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আর কখনও হয়নি।
এমতাবস্থায় অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত মনে না হওয়ায় আমরা চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতএব, এই পত্রটিকে আমাদের পদত্যাগপত্র হিসেবে গণ্য করে তা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ষসহ ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, অনুদান কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে সম্পূর্ণভাবে মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে সেই সভার সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের আগেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে কিন্তু এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আর কখনও হয়নি।
এমতাবস্থায় অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত মনে না হওয়ায় আমরা চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতএব, এই পত্রটিকে আমাদের পদত্যাগপত্র হিসেবে গণ্য করে তা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আপনার মতামত লিখুন :