ডেস্ক রিপোর্ট : সাংবাদিক-বিশ্লেষক মাহফুজউল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে তার কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরলেন বন্ধু, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
“সে তার নীতি ও আদর্শের সাথে সংগ্রাম করেছে, যুদ্ধ করেছে, কিন্তু আত্মসমর্পণ করেনি,” বলেছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
৬৯ বছর বয়সী মাহফুজউল্লাহ গত ২ এপ্রিল গত ২৮ এপ্রিল থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মারা যান। তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
মাহফুজউল্লাহ স্মরণে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে।
এতে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা, অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “এটি ছিল একটি দোয়া মাহফিল, এটি একটি নাগরিক শোকসভায় রূপান্তরিত হয়েছে।
“জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন, আমাদের মতো পেশাজীবীরা উপস্থিত আছেন। এটাই প্রমাণ করে আমাদের সহকর্মী মাহফুজউল্লাহ কত প্রিয় ছিল সকলের কাছে।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “মাহফুজউল্লাহর একটা গুণ ছিল মিলে-মিশে কাজ করার। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।”
অধ্যাপক এম শমসের আলী নিজের সরাসরি ছাত্র হিসেবে মাহফুজউল্লাহর সঙ্গে নানা স্মৃতি তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে।
তিনি বলেন, “আর্লি সেভেনটিজে আমি আনবিক শক্তি কমিশনের চৌকিদার থাকা অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। ওদের দুইটি গ্রুপ ছিল- একটি গ্রুপে ওয়াজেদ আলী সাহেব পড়াতেন, আরেকটি গ্রুপে আমি পড়াতাম। ও (মাহফুজউল্লাহ) আমার গ্রুপে ছিল।
“একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম সে সাংবাদিকতা করত, অনেক আন্দোলনেও জড়িত ছিল, তবে ক্লাসে নিয়মিত আসত।”
মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “এদেশে টক শো যখন চালু হয় আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাকে অতিথি করার। তাকে নিয়ে অনেকগুলো টক শো হয়েছে। অনেক রকমের স্মৃতি আছে। একসাথে ১৮টা কাভার স্টোরি লেখেছি বিচিত্রায় (বিলুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রা)।
“মাহফুজউল্লাহর মতো উদার মনের মানুষ হয় না। তার মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে সবাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তার কারণ একটাই এই সমাজ যেমন বিভক্ত, আমরা সাংবাদিকরাও বিভক্ত, এই বিভক্ত সমাজে মাহফুজউল্লাহ ছিলেন দিক-নির্দেশক। সে নির্ভিক, স্পষ্টবাদী, সৎ সাংবাদিক ছিলেন, তার তুলনা হয় না।”
যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, “মাহফুজউল্লাহ ভাই একজন নির্ভিক পেশাজীবী সাংবাদিক ছিলেন। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে আমাদের সকলে কাছে একজন প্রিয় মানুষ হয়েছিলেন।”
কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ।
মিলাদ মাহফিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, ড. এম আতিক রহমান, মানবাধিকারকর্মী খূশি কবির, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির, ডিবিসি‘র সিইও মঞ্জরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এমএ আজিজ, আবু ছালেহ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ওমর ফারুকসহ প্রবীণ-নবীন সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এছাড়াও ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রুহুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মনিরুল হক চৌধুরী, ইসমাইল জবিউল্লাহ, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, নাজমুল হক নান্নু, নুর মোহাম্মদ খান, জেএম সিরাজ, জহিরউদ্দিন স্বপন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শামীমুর রহমান শামীম, শায়রুল কবির খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার খন্দকার লুফর রহমান, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না প্রমুখ।
মিলাদে প্রয়াত সাংবাদিকের ছেলে মোস্তফা হাবিব অন্তুসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজউল্লাহর মেয়ের নুসরাত হুমায়রা বলেন, “আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমার বাবার কর্ম, তার চিন্তাবোধ, তার সততার প্রতি যে সংগ্রাম ছিল, সবকিছুকে আপনারা আপনাদের হৃদয় ধারণ করবেন। তাহলে আমার বাবা চিরকাল বেঁচে থাকবেন।”
বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ তার লেখা ‘ভাইটি আমার হারিয়ে গেলো’ কবিতাটি নিজেই আবেগময় কণ্ঠে পড়ে শোনান।
উৎসঃ বিডিনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :