বিভুরঞ্জন সরকার: যারা ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়েননি তারা 'ডিসকভারি চ্যানেল' চালিয়ে দেখে নিতে পারেন, আফ্রিকার অরণ্যে সিংহ কীভাবে তাড়া করে নিরীহ তৃণভোজী হরিণ শিকার করছে, তারপর তাকে রক্তাক্ত করছে। ভক্ষণ করে পরিতৃপ্তির ঘুম দিচ্ছে ইত্যাদি। ওই মার্কিন চ্যানেলে জঙ্গলজীবনের এই ধরনের বিস্তারিত বিবরণ দিনের পর দিন আবার একই ছবি বা বিষয়ের পুনঃপুনঃ সম্প্রচারের অর্থ কি? জঙ্গলে 'শিকারী' আছে, আর আছে 'শিকার'। যার শক্তি আছে সে কমশক্তিবান শিকার ধরবে, ছিন্নভিন্ন করবে। এটাই তো জঙ্গলের আইন। জঙ্গলে টিকে থাকবে সে-ই যার টিকে থাকার ক্ষমতা আছে। বিগত হাজার হাজার বছরে বহু প্রজাতির জীবজন্তু এইভাবে বিলোপ পেয়েছে।
আফ্রিকার জঙ্গলের এই বর্ণনা পুনঃপুনঃ দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে অনুচ্চারিত বার্তা মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে তা হলো 'সামাজিক ডারউইনবাদ'। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আফ্রিকার জঙ্গলে এই নিয়মের ফলে 'সামগ্রিক ভারসাম্য' বজায় থেকেছে। সমাজ জীবনে সেই একইভাবে বজায় রাখতে হবে ভারসাম্য। হরিণ আর বাঘ বা সিংহ চিড়িয়াখানায় স্বচ্ছন্দে সহবাস করে। কি করে? চিড়িয়াখানায় কিছু 'আইন' আছে যার সাহায্যে বাঘ বা সিংহকে হরিণ শিকার থেকে বিরত রাখা যায়। জঙ্গলের 'রুল অফ দ্য গেম' এখানে খাটবে না। বাজার অর্থনীতির অনুচ্চারিত 'রুল অফ দ্য গেম' হলো 'সারভাইভ্যাল অফ দ্য ফিটেস্ট'। অর্থাৎ, যার টিকে থাকার ক্ষমতা আছে, সে থাকবে। যার নেই, সে শেষ হয়ে যাবে। এখানে 'করুণা'র কোনো স্থান নেই।