এম জহিরুল ইসলাম : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ। ৭ খুনের নৃশংসতা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীকেই নয়, পুরো বিশ্ববাসীকেও নাড়া দিয়েছিল। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পূর্ণ হলেও হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়ন হয়নি। নিম্ন আদালতের পরে হাইকোর্টেও দ্রুত রায় ঘোষণা করা হলেও আপিল বিভাগে রায়টি নিষ্পত্তিতে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। তাদের দাবি, উচ্চ আদালত যেন দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শেষ করে আসামিদের শাস্তির রায় কার্যকর করেন। সারা বাংলা
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭জন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীর চর ধলেশ্বরী এলাকা থেকে ৬জনের ও ১ মে ১ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর (নাসিক) নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।
২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ২টি মামলায় নূর হোসেনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২টি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে। যার মধ্যে ২টি মামলার বাদি, ২জন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১০৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো ও তাদের বক্তব্য গ্রহণের কার্যক্রম। ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। গত ৩০ নভেম্বর শেষ হয় ৭ খুন মামলার আইনি কার্যক্রম।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন ৭ খুন মামলার রায় ঘোষণা করেন। ৭ খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র্যাবের চাকরিচ্যুত অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, উপ অধিনায়ক মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও ক্যাম্প ইনচার্জ লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। বাকি ৯ জনের মধ্যে অপহরণ ও লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত থাকায় ১ আসামিকে ১৭ বছর, অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৬ জনকে ১০ বছর এবং লাশ গুমে জড়িত থাকায় ২ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট ৭ খুন মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বাকি ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে যে ২৬ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের নিম্ন আদালত তাদের মধ্যে প্রধান চার আসামিসহ ১৫জনের মৃত্যুদণ্ড আদেশ বহাল রাখে হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি ১১জনকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :