ডেস্ক রিপোর্ট : পানি নেই সোমেশ্বরীর বুকে। আজ শুধুই ধু-ধু বালুচর। দুর্গাপুরের পাহাড়িকন্যা সোমেশ্বরী নদী, যার বুকে হাজারো মানুষের জীবিকা। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীটি যেন দিয়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরকে প্রাণ। এই নদীর বুকে লাকড়ি, কয়লা, পাথর ভেসে আসত একসময়। আর তা দিয়েই হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। এখন শুধু বালুই তোলা যায়। তাও আবার প্রভাবশালী ছাড়া গরিবেরা পায় না। কিন্তু ভেসে আসা লাকড়ি, কয়লা, নুড়িপাথর তুলে সীমান্তের আদিবাসী, হাজং, বাঙালি গরিব মানুষেরা জীবিকা নির্বাহ করত।
আজ তারা বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে। ধরন পাল্টেছে তাদের জীবিকা নির্বাহের। এ কারণে সীমান্ত উপজেলায় বেড়ে গেছে অপরাধ। অনেকেই সীমান্তপথে ভারতীয় পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের তাগিদে তারা করছে এসব কাজ। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার সাবান, স্নো, পাউডার বহন করছে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আদিবাসী বলেন, ‘আগে তো আমরা নদী থেকে লাকড়ি, কয়লা তুলে সংসার চালাতাম। এখন নদীর বুকে খালি বালু আর বালু। ঢল চলে গেলে নদী শুকিয়ে যায়।
কিন্তু আগে এই সোমেশ্বরী এমন ছিল না। অনেকের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে যেত এই নদীর স্রোতে। এখন তো ওপারে হেঁটে চলে যাওয়া যায়। বউ-বাচ্চা পালতে হয়। পেটের দায়ে এখন ভারত থেকে মাল আনা-নেওয়া করি। ঝুঁকি তো থাকেই। কখন গুলি করে। আবার মাঝেমধ্যে ধরেও নিয়ে যায়।
প্রতিদিন মেলা টাকার জিনিস আসে। আর এসব জিনিস শুধু দুর্গাপুরেই বিক্রি হয় না, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় যায়।’ আদিবাসী নেতা বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক স্বপন হাজং বলেন, এই নদীকে কেন্দ্র করে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা তো অপারগ হয়েই অন্য পেশায় গেছে। নদীটি এখন বালুদস্যুদের দখলে।
এ কারণে সাধারণ মানুষ এই প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রেজার বসালে নদীর খনন যেমন হতো, তেমনি সঠিকভাবে এই সম্পদের ব্যবহারও হতো। এখন তো যে যেভাবে পারছে নিজের সুবিধামতো প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে। হাজার হাজার গরিব ছিল, যারা এই নদীর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনার মতামত লিখুন :