শিরোনাম
◈ বিমান বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের  উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ◈ নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত হচ্ছে, আস্থা রাখতে চায় দলগুলো ◈ বর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ, ভারতের চাপে অস্ট্রেলিয়া ◈ কপ২৯: ২০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দে ইইউর সমর্থন চাইল বাংলাদেশ ◈ মামলা করলে ৫ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার করে পাওয়া যাবে ◈ কলকাতার মেট্রোরেলে নারী যাত্রীকে বাংলা বাদ দিয়ে হিন্দিতে কথা বলা নিয়ে বাকবিতণ্ডা (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশসহ ১২৪ দেশে পা রাখলেই গ্রেফতার হবেন নেতানিয়াহু, দেশগুলো হল.. ◈ ‘বুক কাঁপে না  মিথ্যাচার করতে?’ ট্রলের জবাবে  উপস্থাপিকা দীপ্তি ◈ এবার পশ্চিমাদের ওপর হামলার ইঙ্গিত পুতিনের ◈ পাঁচটি দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ০৯:৪১ সকাল
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ০৯:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুপেয় পানি স্রষ্টার বিশেষ দান

আতাউর রহমান খসরু : পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব পানির ওপর নির্ভরশীল। তাই পানির অপর নাম জীবন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে পানিকে জীবনের অপার রহস্য হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি পানি থেকে সব জীবকে সৃষ্টি করেছি। তোমরা কি ঈমান আনবে না?’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)

পানির ওপর জীবন-জগতের সীমাহীন নির্ভরতার কারণেই ইসলাম পানিকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তা রক্ষা মানবজাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তিনটি বিষয়ে পরস্পরের অংশীদার। পানি, ঘাস (বাণিজ্যিক ও মালিকানাধীন ভূমিতে নয় এমন) ও আগুন।’ (ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বও তুলে ধরে বলেছেন, ‘তোমরা যে পানি পান করো, তা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি? আমি চাইলে তা নোনা করে দিতে পারি, এর পরও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না?’ (সুরা : ওয়াকিয়াহ, আয়াত : ৬৮-৭০)

কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেছেন, এই আয়াতে ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’-এর উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ ও অমূল্য সম্পদ পানির অপচয় রোধ করা এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর নোনা করে দেওয়ার অর্থ ব্যবহার অযোগ্য হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

কোরআনের এসব আয়াত ও অনুরূপ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, বৈশ্বিক সম্পদ পানি ও তাতে বিশ্ববাসীর অধিকার রক্ষা করা। এ জন্য আধুনিক যুগের ফকিহরা বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মত দিয়েছেন। পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী দিনের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদের পানির স্রোতধারা সরবরাহ করবে?’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৩০)

কিন্তু কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা উপেক্ষা এবং বৈশ্বিক সম্পদ পানির সুষ্ঠু বণ্টন ও রক্ষায় উপযুক্ত উদ্যোগ না থাকায় পৃথিবীতে এরই মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী দিনে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহই হবে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।

২৮ জুলাই ২০১০ তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশনকে মানুষের অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওএইচসিএইচআর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট বিষয়ে বলেছে, ‘জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার পানি মানুষের মৌলিক অধিকার। পর্যাপ্ত ও নিরাপদ খাবার পানি মানবাধিকার ধারণার পূর্বশর্ত। বৈশ্বিক পানি সংকট মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি, খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা অর্জন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ।’

গত ২২ মার্চ ২০১৯ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৭৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৯ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের সুযোগ পায় না। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় শুধু বিশুদ্ধ পানি নয়, পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকারের ব্যাপারে সরকার কি দায় অস্বীকার করতে পারে? বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত না করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কি সম্ভব হবে?

২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৪/২৯২ নম্বর রেজল্যুশনে বলা হয়েছে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশন অপরিহার্য। রেজল্যুশনে উন্নত রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অর্থসংস্থান, সামর্থ্য বাড়াতে সহযোগিতা ও প্রযুক্তি সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবার জন্য নিরাপদ, বিশুদ্ধ, ব্যবহারযোগ্য ও সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আদালত ও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় আদালত পানিকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন—১৯৯১ সালে ইন্টার-আমেরিকান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস ‘সোহোয়াইমাক্স আদিবাসী বনাম প্যারাগুয়ে’ মামলায় পানিকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মানুষের বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হয়—এমন কার্যক্রমকে আইনত নিষিদ্ধ বলে মত দিয়েছে।

সুতরাং দেশের কাঙ্ক্ষিত টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশুদ্ধ পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখন থেকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে এসব উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো রক্ষা করতে হবে এবং জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অঙ্গীকার সামনে রেখে সরকারকে আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক
সূত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়