ইউসুফ বাচ্চু : ওয়াসার এমডি টিআইবির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করার পর এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ওয়াসা এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করতেই পারে, এতে আমি অবাক হচ্ছি না। ওয়াসার নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের একছত্র আধিপত্য। আসলে ওয়াসার কর্মীদেরই মতামতে এ রিপোর্ট উঠে এসেছে। ফলে এমডির এভাবে প্রত্যাখ্যান করা ঠিক হয়নি। আমাদের প্রতিবেদনকে সঠিক মনে করি। এটা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিকভাবে করা হয়েছে। এ গবেষণা প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো সুযোগ নেই। পুরো গবেষণা কাজে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এমনকি তাদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। তার দালিলিক প্রমাণও রয়েছে। সব বিষয় ওয়াসার পরিচালক ওয়াকিবহাল আছেন। পরিচালকের ওপেনিয়ন নিয়েছি একাধিকবার। এটা চিহ্নিত করার ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকতেই পারে। আমারা আশা করব তাদের সাথে কাজ করবো এবং সহয়তা করার জন্যই। টেকনিকেল সাপোর্ট দিয়ে তাদের কাজগুলো পরামর্শ দিয়ে সহয়তা করবো।
শনিবার গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র গবেষণা প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাসকিম এ খান বলেছেন, টিআইবির এটি কোনো গবেষণা নয়, এটি একটি প্রতিবেদন। একটি সাদামাটা এবং একপেশীও প্রতিবেদন। এখানে স্ট্যান্ডবাজি হয়েছে। ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাসকিম এ খান বলেন, এটা প্রফেশনাল কোনো গবেষণার প্রতিবেদন নয়, এটা একটা রিপোর্টের মতো হয়েছে। রিপোর্টে টিআইবি নিজেদের পার্সপেক্টিভ উল্লেখ করেছে, এটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে ডাটা কালেক্ট করতে পারেনি। রিপোর্টে উল্লেখ করা ওয়াসার অনিয়মের অভিযোগটি ঢালাও।
ঢাকা ওয়াসার নিম্নমানের পানির কারণে প্রতিবছর পানি ফুটাতে অপচয় ৩৩২ কোটি টাকা। টিআইবির গবেষণার এমন ফলাফলের বিষয়ে তাকসিম এ খান বলেন, এই তথ্য সম্পূর্ণ হাইপোথেটিক্যাল এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। ঢাকায় বসবাসরত এক কোটি ৭২ লাখ লোক সবাই পানি ফুটিয়ে পান করেন না। ফুটানোর প্রয়োজনও পড়ে না। তবে মাঝে মাঝে পুরনো পাইপলাইন ও বাসার ট্যাংকি ময়লা হওয়ার কারণে পানি দূষিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) সংশ্লিষ্ট সবার মানদ- অনুযায়ী ল্যাবরেটরিতে পানি পরীক্ষা করে গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করি। এসব ল্যাবরেটরি টেস্টের ফলাফল আমার কাছে আছে। আমি বলতে পারি যে আমাদের পানি শতভাগ সুপেয়।
তাকসিম আরও বলেন, ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। ওয়াসার সমস্ত জিনিস অটোমেশন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। শুধুমাত্র মিটার রিডিং করতে একজন মিটার রিডার বাসায় বাসায় যান। এটাকেও অটোমেশন করে ফেলব। ইতোমধ্যে আমরা পাইলট হিসেবে এ কাজ শুরু করেছি, সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। এতে অনিয়ম দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
এরই প্রেক্ষিতে টিআইবির পরিচালক বলেন, তারা এটা বলতেই পারেন। তবে জনগণের অবিজ্ঞতায় কি বলছে এটা বড় বিষয়। ঢাকা শহরে যারা ওয়াসার পানি পান করা আর কোনো উপায় নেই। তাছাড়া কেউ কি পানি না ফুটিয়ে পান করে? ওয়াসা তাদের মুখের কথা তারা বলবে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। রিপোর্টে গড়মিল থাকতেই পারে। কিন্তু এ তথ্য তাদেরই কাছ থেকে সংগ্রহ করা। আমরা তো আর তথ্য বানায়নি। তাদের সাথে গবেষণা টিমের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা আর রাজনৈতিক নেতৃত্বে একাংশ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান একই রকম হয়ে গেল। ওয়াসা তো রাজনৈতিক প্লাটফর্ম না। এটি একটি জনস্বার্থের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান।
আপনার মতামত লিখুন :