বিভুরঞ্জন সরকার : বিএনপির নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্যকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে। না হলে তাদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো, বিএনপির ছয়জন কি এমপি পদ ধরে রাখবেন, না এতে তাদের আগ্রহ নেই? প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য পাঁচ নির্বাচিত এমপি শপথ নেয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। তারা কেবল দলের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন। দল যদি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে পাঁচজন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিএনপিতে এক ধরনের টালমাটাল অবস্থা চলছে। দলের চেয়ারপরসন জেলে। এখন চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আছেন। বাজারে গুজব, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাবেন। বিএনপি নেতারা প্যারোলের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। বলছেন, প্যারোল নয়, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু সরকার কেন বিএনপির আবদার মানবে? সরকার তো কোনো দিক দিয়েই কোনো চাপে নেই। তাছাড়া বিএনপি কখনই সরকারের কাছ থেকে কোনো দাবি আদায় করতে পারেনি। বিএনপি আন্দোলনের দল নয়। এটা এখন বিএনপিও বোঝে। বিএনপিতে গরম কথা বলার লোকের অভাব না থাকলেও রাজপথে নেমে আন্দোলন করার লোকের প্রচন্ড অভাব। তাই বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতেও দলের সবাই উপস্থিত থাকেন না, অংশ নেন না।
বিএনপির মধ্যে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে যেভাবে দল চালাচ্ছেন তাতে দলে সমস্যা বাড়ছে। বিএনপি নেতারাই এখন নিজেদের নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন। কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন। বলছেন, ‘হতাশ হবেন না, হতাশার কথা শুনতে চাই না। বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যায়নি’। তার এসব কথায় কেউ উজ্জীবিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। বিএনপি নিঃশেষ না হলেও দলটি যে অঘোষিতভাবে বেড রেস্টে আছে সেটা বুঝতে কারো অসুবিধা হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের নেত্রী জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন, তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনিই গণতন্ত্রকে মুক্ত করবেন’। নিজে মুক্ত না হয়ে বেগম জিয়া গণতন্ত্রকে কীভাবে মুক্ত করবেন সে প্রশ্ন অবশ্য আছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, যেকোনো উপায়ে দলনেত্রীকে মুক্ত করার বিষয়টিকে বিএনপি নেতৃত্বের বড় অংশ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছেন। বাইরে গরম কথা বলে ভেতরে নরম অবস্থা নেয়া বিএনপির বর্তমান কৌশল। সেজন্যই বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়া এবং ছয়জন নির্বাচিত এমপির শপথ গ্রহণের বিষয়টিও প্রায় নিশ্চিত বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। সম্ভবত ২৬ এপ্রিলই দেশত্যাগ করবেন বেগম খালেদা জিয়া। যদি কোনো কারণে সেটা না হয়, তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে স্থানান্তরিত করা হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির ছয় এমপি কি করবেন সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। অন্তত পাঁচজন এমপি যদি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন তাহলে দল কি তাদের বহিষ্কার করবে? এমপিদের ওপর শপথ নেয়ার ‘চাপ’ আছে। এলাকার ভোটারদের যেমন চাপ আছে, তেমনি আরো শক্ত চাপ থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে সংসদে যাওয়া, নাকি খালেদার কারাজীবন দীর্ঘ করে বিএনপির সংসদের বাইরে থাকা – এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্নের ফয়সালা বিএনপিকে করতে হবে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই। এই ইস্যুতে ৩০ এপ্রিলের পরে যাওয়ার সুযোগ বিএনপির নেই।
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :