শিরোনাম
◈ আগামী ৩০ বছরে মানুষের বিলুপ্তি ঘটাতে পারে এআই : এআই গডফাদার হিন্টন ◈ দুপক্ষের সংঘর্ষ:  ইউপি সদস্য ও তার ছেলেসহ তিনজন নিহত, এলাকা পুরুষশূন্য! ◈ দলের চাঁদাবাজির জন্য একটি দল যদিও বহিষ্কার করেছে, তবে তা যথেষ্ট নয়: উপদেষ্টা সাখাওয়াত (ভিডিও) ◈ কোন পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়িত হয় তাদেরকেও ছাড় দেওয়া হবে না: ডিএমপি  ◈ কেউ পদ–পদবি দখলে কেউ নিজস্ব লোক পুনর্বাসনে ব্যস্ত, খুনিদের বিচারে গুরুত্ব নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান ◈ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় কারা জড়িত? নানা মন্তব্য ◈ দুই ট্রাক নথিপত্র গায়েব হচ্ছে ভেবে আটক করলো স্থানীয় জনতা ◈ টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে ধাক্কা, সেই বাসচালক গ্রেপ্তার ◈ সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার সীমিত, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পর্যালোচনা শিগগির: প্রেস সচিব ◈ দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৩৪ রাত
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভুটানকেও বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে সেরিং!

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ‘দাদা কেমন আছেন? দিদি আপনি এখন কোথায়? বাসায় চলে আসেন, আড্ডা দেয়া যাবে’Ñএকজন ভিনদেশি প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন দেশি সম্বোধনে, প্রাণটাই জুড়িয়ে গেলো! ডা. লোটে সেরিং ভুটানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি, ডা. নুজহাত চৌধুরী ও আমি ঘটনাচক্রে একইসময় একই ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন কাটিয়েছি। যদিও তিনি আমাদের একাডেমিক জুনিয়র। যোগাযোগ আর ঘনিষ্ঠতা সে সময়ে। ’৯১-এর নির্বাচন পরবর্তী যে উত্তাল বাংলাদেশকে ডা. লোটে দেখেছিলেন সেটা যে তার জন্য কতোটাই অন্য রকম আর অচেনা ছিলো সেটা বুঝলাম এবার ভুটান গিয়ে। ভুটানে এটাই ডা. নুজহাত ও আমার প্রথম যাওয়া। কনফারেন্স, লেকচার ইত্যাদি নানা কারণে মাঝে মাঝেই আমাদের এদিক-সেদিক যাওয়া পড়ে। কিন্তু ঘরের পাশে ভুটানে যাওয়া পড়েনি কখনই।

ডা. লোটের সঙ্গে প্রথম পরিচয় যতোদূর মনে পড়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের আরেক ভুটানি গ্র্যাজুয়েট ডা. ফোব-দর্জির মাধ্যমে। ডা. ফোব ছিলেন আমার সামান্য সিনিয়র। ডা. লোটে যে সময়ে ময়মনসিংহে পা রাখেন সে সময়টায় দেশে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের সদ্য অবসান হয়েছে। ’৯১-র নির্বাচনে জিতে জাতীয়তাবাদী শক্তি সদ্য ক্ষমতায়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যখন চলছে জাতীয়তাবাদী চিরুনি অভিযান। যাদের গায়েই অন্য রকম গন্ধ তাদের হোস্টেলে ঠাঁই নিই। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের বয়েজ হোস্টেলেও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। সারি সারি খালি হোস্টেলের রুমগুলো আর ময়মনসিংহ শহরের ব্রাহ্মপল্লী, মাসকান্দা, চামড়া গুদাম, রুটিওয়ালাপড়া, খ্রিস্টান পল্লী ইত্যাদি সব জায়গায় ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে অসংখ্য বেসরকারি ছাত্রাবাসÑএই ছিলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চালচ্চিত্র।

আমাদের ব্রাহ্মপল্লীকেন্দ্রিক ওই নিউক্লিয়াসটা ছিলো তাকে কেন্দ্র করে শহরের ওই অঞ্চলটায় গড়ে উঠেছিলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মীদের একটা বড় কনসেনট্রেশন। হোস্টেল বনাম ব্রাহ্মপল্লী ‘আনফ্রেন্ডলি ম্যাচও’ হয়েছে বার কয়েক। সেখানে ডা. লোটের ব্যাচের কিছু সহপাঠীরও ছিলো নিত্য আনাগোনা। সে সুবাদেই মাঝে মাঝে আসা হয়েছে তারও। কাছ থেকে তিনি দেখেছেন, বুঝেছেন সে সময়কার ময়মনসিংহ তথা পুরো দেশের চালচ্চিত্র। কতোটা বিস্মিত হয়েছেন, অদ্ভুতুড়ে অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়েছেন জানি না। তবে থিম্পুর সৌম্য পরিবেশ, ভুটানিদের নিয়ম আর আইনের প্রতি অনুরাগ আর নির্বিবাদী যে চেহারা সদ্য দেখে ফিরলাম, তাতে শুধু লজ্জিতই হয়েছি। কী ধারণাই না সেসব বিদেশিরা এ দেশ থেকে নিয়ে ফিরেছেন যারা সেই নষ্ট সময়ে এ দেশে লেখাপড়া করতে এসেছিলেন।

তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের কিবা গুণ আছে জানি না। ভুটানের সদ্য নিযুক্ত অর্থমন্ত্রী ডা. তানডিন দর্জিও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজেরই গ্র্যাজুয়েট। শপথ গ্রহণের পর দেখা হতেই, ‘ভাই আমি কিন্তু এম ২৪ (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৪তম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েট)’ বলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ভালো আছেন ডা. ফোব দর্জি। তিনিও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের গ্র্যাজুয়েট, ডা. তানডিনের ব্যাচমেট। কিছুদিন আগে ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ১৯ ভোটে হেরে গেছেন। ভুটানের বর্তমান শাসকদলের অন্যতম কর্ণধার। আছেন আরও একজন চিকিৎসকও। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের গ্র্যাজুয়েট না হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। ভুটানে যাওয়ার পর থেকে যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শুনতেই হেসে জানতে চেয়েছেন ওখানে এমবিবিএসের পাশাপাশি পলিটিক্যাল সায়েন্সেও গ্র্যাজুয়েশন করানো হয় কিনা।

ডা. লোটে আর ডা. ফোব দর্জিও রসিক করে একই প্রসঙ্গ তুলতে ভুলেননি। বা গেলেন না এমনকি ভুটানের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট (উপাচার্য) অধ্যাপক সেরিংও। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে বের হয়ে আসার পর মাঝে কিছুদিন ডা. লোটের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ছিলো। যোগাযোগটা আবার ঘনিষ্ঠ সম্ভবত ২০১০ সাল থেকে সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্য লিভারের সুবাদে। যদিও তিনি পেশায় সার্জন, অ্যান্ডোসকপি আর বিশেষ করে ইআরসিপিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। ভুটানের একমাত্র ইআরসিপি বিশেষজ্ঞ আসলে তিনিই। আমার কাজের সঙ্গে তার যোগাযোগের সূত্রটা এভাবেই।

তার গ্রুপের কাজ করেন এমনি কারও কারও সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে কাজ করার সুবাদেও যোগাযোগটা আরও গাঢ় হয়েছে। সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্য লিভারের কনফারেন্সে সংগঠনটির জিএস নির্বাচিত হওয়ার পরও তার অভিন্নতা পেয়েছি। ডা. লোটে নির্বাচনে জিতেছেন। ভুটানের সংসদের ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩০টির বেশিতে জিতে সংসদে তার দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়া আর মূলধারার মিডিয়াতেও এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। দেখেছি, পড়েছি আর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের আর দশজন গ্র্যাজুয়েটের মতোই আমিও মনে মনে অত্যন্ত পুলকিত হয়েছি। কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেয়ার ব্যাপারটা মাথায় ছিলো না। দাওয়াত পাওয়ার পর অবশ্য দ্বিতীয় কোনো চিন্তাই আর করিনি।

দেশে-বিদেশে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ। তার ওপর বাড়তি পাওয়া না দেখা ভুটান দর্শন। অতএব অন্য চিন্ত মাথায় আনার সুযোগই বা কোথায়? ভুটানের কালচারটা একটু অন্য রকম। রাজার কাছ থেকে দায়িত্ব পালনের অনুমতি পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আর যার যার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ আর ভোটারদের আগে সাক্ষাৎ দেন। তারপর সুযোগ পান সংসদ সদস্যরা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমার মতো যারা। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে কিঞ্চিত অপেক্ষ।

অপেক্ষায় আরও আছেন ভুটানের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। ডেপুটি চিফ অব প্রটোকল। সদ্যই দায়িত্ব নিয়েছেন, এখনও সবকিছু ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। এদিকে বিশিষ্ট আগতরা প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায়। বেচারা বিব্রত হতেই পারেন। এদিকে আলাপচারিতায় জমে উঠেছে দুই সাবেক মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে। তাদের কথায় প্রশংসা বাংলাদেশের, উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। তাদের প্রত্যাশা তাদের এই নতুন, তরুণ প্রধানমন্ত্রী ভুটানকেও নিশ্চয় ‘বাংলাদেশ’ বানিয়ে ফেলবেন। ফুলতে ফুলতেই বুকটা শুধু ফাটতে বাকি থাকে। চোখের জল সংবরণ করা অসম্ভবপ্রায়! এর মধ্যেই হঠাৎ ডাক পড়লো আমাদের জন্য অপেক্ষায় নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আর দেখা হওয়ার পর তার আন্তরিকতায় আরও একবার চোখে পানির ধারা। প্রত্যাশা ছিলো চিনবেন নিশ্চয়ই।

তবে এতোটা বেশি আন্তরিকভাবে আরও একবার যে কাছে টেনে নেবেন তা ছিলো প্রত্যাশার বাইরে। এতোটাই বেশি আন্তরিকতা প্রধানমন্ত্রীর যে, আমার ছেলে সূর্য্যরে প্রশ্ন, ‘ইনি-ই কী প্রধানমন্ত্রী নাকি’? একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের প্রতি একজন প্রধানমন্ত্রী এতো বেশি আন্তরিকতা ছোট্ট সূর্য্যকেও বিস্মিত করেছে। ভুটান থেকে যখন ফিরছি, বিমানে বসে দু’টি অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন আমি। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই গাঢ়। স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী রাষ্ট্র ভুটান।

৭১’র পর এই সম্পর্ক আরও উচ্চতর মার্গে টেনে তোলার এই বোধ করি শ্রেষ্ঠ সময়। দেশটির সরকার আর সরকারি দলের যারা কর্ণধার তারা বাংলায় কথা বলেন, বাংলাদেশকে ভেতর থেকে চেনেন আর সবচেয়ে বড় কথা প্রচ- ভালোবাসেন। পাশাপাশি মনে হচ্ছিলো প্রচ- সৌভাগ্যবান আমি। একজন প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে আশার সুযোগইবা এক জনমে ক’জন পায়? সেখানে আমি সেই বিরল সৌভাগ্যবানদের মধ্যে যার সৌভাগ্য হয়েছে দেশে-বিদেশে দু’জন প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে আসার, যাদের একজন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ আর অন্যজন শ্রেষ্ঠতম! একুশে ডটকম টিভি
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়