আরিফুল কাদের : আরবি বারো মাসের প্রত্যেক মাসেই বিশেষ আমল রয়েছে। তন্মধ্যে বরকতময় শাবানেরও কিছু মাসনূন বিশেষ আমল রয়েছে। যা আমাদের করা উচিত। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন- শাবান মাসের মধ্য রাতে (১৫ শাবান) আল্লাহপাক প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং প্রতিটি (মুমিন) বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে পরশ্রীকাতর এবং মুশরিক ব্যতীত। (সূত্র : কিতাবুস সুন্নাহ, শরহুস সুন্নাহ)
১৫ শাবানের রাত গুরুত্বপূর্ণ থাকায় এ রাতটাকে ইবাদতে কাটানো উচিত। আবার দিনের বেলায় নফল রোজা রাখা প্রয়োজন। কেননা, এ বিষয়ে হজরত আলী (রা.) থেকে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন যখন মধ্য শাবানের রাত আসবে, তোমরা রাতে নফল নামাজ আদায় করবে আর দিনের বেলায় নফল রোজা পালন করবে। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন। আছে কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব; আছে কি কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী, আমি তাকে রিজিক দান করব; আছে কি কোনো বিপদাপন্ন, আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দান করব। এভাবে তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি)
শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। শাবান মাসে আল্লাহর অবারিত রহমত ও অফুরন্ত করুণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে বান্দারা নিজেদের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে। হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, যখন শাবান মাস আগমন করত তখন রাসুল (সা.) বলতেন, এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তর্জগৎকে পাক-পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ-সঠিক করে নাও। (তাবরানি)
মধ্য শাবান বা শবে বরাত মহান আল্লাহর দেওয়া একটি পবিত্র রাত। এ রাতে অনেক পুরুষ-মহিলা ইবাদাতে মশগুল থাকেন । কেউ আবার মনগড়া রীতি-নীতি নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কারমূলক কাজ সওয়াবের আশায় করে থাকেন। এতে সওয়াব না হয়ে হয় কঠিন গুনাহ। যেমন- আতশবাজি বা আলোকসজ্জা করা, মসজিদে অযথা মোমবাতি জ্বালানো, গরু, ছাগল, মোরগের গোশত যোগাড় করাকে আবশ্যক মনে করা। এ ছাড়াও পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে আমাদের দেশে হালুয়া, রুটি বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। অথচ হালুয়া-রুটি সম্পর্কে কোনো প্রমাণ শরিয়তে নেই। এটা সম্পূর্ণ বিদআত। (বেহেশতি জেওর)
একইভাবে এই শাবান মাসের শেষের দিকে সন্দেহের দিন (২৯ তারিখ) রোজা রাখা নিষেধ। ওই দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে চাঁদ ওঠার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সন্দেহের ভিত্তিতে রোজা রাখা বৈধ নয়। আমর ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘যে সন্দেহের দিন রোজা রাখল, সে আবুল কাসেমের (রাসুলের সা. উপনাম) অবাধ্য হলো।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)
আপনার মতামত লিখুন :