নিউজ ডেস্ক : সন্ধ্যার পর তার ঘরে নিভু নিভু করে জ্বলে কুপিবাতি। কেরোসিনের ক্ষীণ সলতে বাড়িয়ে দিলে তেল না আবার দ্রুত ফুরিয়ে যায়–এই ভয়ে রাত ১০টার আগেই নিভিয়ে ফেলা হয় সেই বাতি। এই বাস্তবতা হলো দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল মতিনের (৪৫)। অথচ তিনিই আজ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার মামলায় কারাগারে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী ওই গ্রামের মৃত অহিদ আলীর ছেলে আব্দুল মতিন মিয়া।
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরও ১৭ মাস বকেয়া বিল না দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা কারাগারে পাঠিয়েছে মুরাদনগর থানা পুলিশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানায়, মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৪ বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এ আবেদন করে। আবেদনের পর স্থানীয় দালাল আবুল কালাম আজাদ ও আবুল বাসার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১৫ হাজার টাকা করে আদায় করে। ওই সময় মতিন মিয়াও আবেদন করেন এবং কর্তৃপক্ষও সংযোগের অনুমোদন দেয়। কিন্তু মতিন মিয়া দালালচক্রকে চার হাজার টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা দিতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাতুরীর আশ্রয় নেয় দালালরা। মতিন মিয়ার অজান্তে কৌশলে তার আবেদনে একই এলাকার মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দিয়ে সফিকুলের কাছ থেকেও টাকা নেয় তারা। এদিকে মতিন মিয়ার নামে মিটার বরাদ্দ হলে তাকে না জানিয়ে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ সে মিটারের সংযোগ দেওয়া হয় সফিকুল ইসলামকে। চতুর সফিকুল দিব্যি মিটারটি ব্যবহার করে এলেও মতিন মিয়াকে কিছুই জানাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিকে মতিনের নামেই সফিকুল মিটারের বিল জমা দিলেও গত ১৭ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে। এতে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে মিটারের অনুমোদন পাওয়া মতিন মিয়ার নামে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিনকে গ্রেফতার করে এবং বুধবার দুপুরে তাকে কুমিল্লা আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান আবেদন ফাইলে ছবি পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আব্দুল মতিনের নামের মিটারে সফিকুল ইসলামের ছবি থাকার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। মামলা হওয়ার আগে মতিন মিয়া নোটিশ পেয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ ঘটনা ঘটতো না। যাই হোক, আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :