দেবদুলাল মুন্না: আসামের ভোটের মাঠে বারবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসছে।আগামী বৃহস্পতিবার আসামের বাংলাভাষী এলাকা বরাক উপত্যকায় ভোট। গত সোমবার বাংলা নববর্ষ পালিত হয় ভারতে। নববর্ষের এক অনুষ্ঠানে বরাক উপত্যকা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির নেতা তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন,‘বাংলাদেশের মতো নববর্ষ বরাক উপত্যকায় হলে আামদের বাঙালিদের মধ্যে এতো বিভাজন থাকতো না।’ এবারের ভোটে বাঙালি জাতিকেই দুই টুকরো করার চেষ্টা চলছে বলে মনে করেন আসামের শিলচর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য।
তিনি গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন,‘বাংলাদেশি-বাংলাদেশি বলে বাঙালি জাতিটাকেই শেষ করার চক্রান্ত চলছে।এখন দরকার বাঙালির একতা।না হলে ভারতের বাঙালিদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।’ বারবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসছে কারণ আসামে বড়ো জনগোষ্ঠীর একটা বড়ো অংশের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশি ছিলেন।বাংলাদেশের জকিগঞ্জের ও ভারতের করিমগঞ্জের মধ্যে একটা নদী।সেই নদীর নাম বরাক।
নাগরিকত্ব সংশোধনী (ক্যাব) বা নাগরিক নিবন্ধনকরণের (এনআরসি) হাত ধরে ‘বাংলাদেশই ভারতের আসাম রাজ্যের ভোটে এবারও প্রধান বিষয়। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সুশীল সমাজও একমত, আসাম এখনো ভোটের প্রচারে ‘বাংলাদেশ’ থেকে বের হতে পারেনি। কারণ আসামের ভোটে নির্ণায়ক শক্তিই হচ্ছেন বাঙালিরা। আর বিজেপির হাত ধরে এবার বাঙালি ভোটকে দু-ভাগে ভাগ করার চেষ্টা বেশি।
কংগ্রেসের হাইলাকান্দি শাখার সংগঠনের নেতা গৌতম রায়। গৌতম রায়ের আক্ষেপ, ‘রাজ্যে সমস্যার অন্ত নেই। অথচ, বাংলাদেশের বাইরে বের হতে পারলাম না।’ বাস্তবে আসামে বেকারত্ব, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দুর্নীতির মতো ভোট রাজনীতির মুখরোচক বিষয় বা স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো গুরুতর বিষয় সরকার বা বিরোধী পক্ষের ভোটের বিষয়ই নয়। এমনকি, ফি বছর বন্যায় মানুষের পাশাপাশি বন্য পশুরাও প্রাণ হারাচ্ছে আসামে। বন্যা প্রতিরোধ নিয়েও ভোট প্রচারে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না কোনো পক্ষ। তাদের মূল বিষয়ই বাংলাদেশ।
শিলচরে বিশিষ্ট আইনজীবী সুধীর সেন বলেন ‘ক্যাব বা এনআরসি আসলে তো বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতীয়দের হয়রানির জাঁতাকল। দরিদ্র বাঙালিদের গায়েও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি তকমা।ভোটারদের নামের পাশে সন্দেহ চিহ্ন এঁকে দিয়ে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে নাগরিকত্ব।’ সন্দেহের বশে ভোটাধিকার হারিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার নাগরিক। বন্দিদশায় রয়েছেন হাজারখানেক। আরও ৭০ হাজারের সন্ধান চলছে। ৪০ লাখ আসামবাসীর নাগরিকত্বও বাংলাদেশি সন্দেহের তালিকায়। এঁদের সিংহভাগই বাঙালি।
খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে ভোটে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ক্যাব বাস্তবায়নের। ক্যাব তো আসলে বাংলাদেশি হিন্দুদেরই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। কংগ্রেসও পাল্টা হিসেবে ক্যাব না দেওয়াকেই হাতিয়ার করেছে। রাহুল গান্ধীর সভাতেও তাই গুরুত্ব পায় অনুপ্রবেশ। নেতাদের দেখানো পথেই ভোটপ্রার্থীর লোকজন চারদিকে শুধু ক্যাব আর এনআরসি নিয়েই প্রচারে ব্যস্ত। আবার আক্ষেপও করছেন নেতারা। বিজেপিও বলছে, উন্নয়নই সবচেয়ে জরুরি।কিন্তু একান্তে তাদের মুখেও শোনা যাচ্ছে আসামে ‘বাংলাদেশি ইস্যু’ই বেশি চলে।
আপনার মতামত লিখুন :