কাজী নুসরাত শরমীন
১৫০৩-১৫০৬ সালের মধ্যকার কোনো এক সময়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আঁকেন তার অমর শিল্পকর্ম মোনালিসা। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এটি। মোনালিসা পুরুষ না নারী , নাকি এর ¯্র ষ্টা ভিঞ্চি নিজেই এঁকেছেন নিজের নারীরূপ, এ বিতর্ক বহুকালের। বলা হয়, নারী ও পুরুষ উভয়েই ওই ছবির মডেল হয়েছিলেন। তবে আরও ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ব্যাখ্যায় জানা যায়, মোনালিসা আসলে ফ্লোরেনটাইনের এক রেশম ব্যবসায়ীর স্ত্রী ২৪ বছর বয়সি লিসা দেল জিওকোনডো। ছবিতে মোনালিসা একটি চেয়ারে বসে হাত দিয়ে পেট ঢাকার চেষ্টা করছেন। ধারণা করা হয় মোনালিসা গর্ভবতী। মজার বিষয় হলো এই ছবিটি যখন আঁকা হয়, লিসা ডিল জিওকোনডোও গর্ভবতী ছিলেন। মোনালিসা ছবিটির আসল নাম ‘মোন্না লিসা’। মোনা হলো ইটালিয়ান নাম ম্যাডোনা এর সংক্ষিপ্ত রূপ। মোন্না লিসার অর্থ হলো ‘মাই লেডি’। ভিঞ্চির কালজয়ী সৃষ্টি মোনালিসা একটি অসম্পূর্ণ চিত্রকর্ম। খেয়ালি এই বাহাতি শিল্পী ইচ্ছাকৃতভাবে এই ছবিটি অসম্পূর্ণ রেখেছেন। এরপর সংরক্ষণ, চুরি যাওয়া, পাথর নিক্ষেপ, এ্যাসিড ছেঁ াড়া ইত্যাদি নানাবিধ কারণে চিত্রকর্মটি নিখুঁত নেই আর। ছবিতে মোনালিসার ভ্রু নেই। শুরুতে যে ভ্রু আঁকা ছিল, ছবিটি সংরক্ষণ করার সময় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের অসাবধানতায় ছবি থেকে ভ্রু মুছে যায়। ১৫১৯ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মৃত্যুর পর ফরাসি রাজাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছবিটি রাখা হয়। ফরাসি বিপ্লবের পর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শোবার ঘরে জায়গা হয় মোনালিসার। ১৮১৫ সালে জনসাধারণের দেখার জন্য এই চিত্রকর্ম রাখা হয় প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে। ১৯১১ সালে নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাবার আশায় এক ইতালীয় প্যারিসের ল্যুভর থেকে ছবিটি চুরি করে। ওই ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রায় দুই বছর ছবিটির কোনো হদিস ছিল না। হারিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মোনালিসা কিন্তু সেই অর্থে বিখ্যাত কোনো শিল্পকর্ম ছিলো না। এরপর ছবিটি আবারও ল্যুভরে ফিরে আসে। মোনালিসাকে নিয়ে সবার অনুভূতির প্রকাশ কিন্তু ইতিবাচক নয়। ১৯৫৬ সালে এই ছবির ওপর ভাঙচুরের দুটি ঘটনা ঘটে। ইগো আনগেজ নামক এক বলিভিয়ান পর্যটক কোনো এক অজানা কারণে ছবিটিতে পাথর ছুঁড়ে মারেন। এতে মোনালিসার শরীরের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ছবির মেয়েটির কুনইয়ের নিচের দিকের রংয়ে কিছুটা তালি লাগানো আছে। একজন তো ছবিটির ওপর অ্যাসিড ছুঁড়ে মারেন। ফলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিত্রকর্মটি। তারপর থেকে, মিউজিয়ামের বিশেষ একটি ঘরে বুলেট প্রুফ গ্লাসের আড়ালে এই চিত্রকর্মটি রাখা আছে। শুধু তাই নয়, জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর এজন্য মিউজিয়ামের খরচ হয়েছে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার। যদিও চিত্রকর্মটি অমূল্য তাই চুরি হওয়ার ভয় থাকলেও এর কোনো বীমা করা হয়নি। ২০০৮ সালে মোনালিসার হেঁয়ালিপূর্ণ হাসির রহস্য ভেদ করা হয়। ‘স্ফুম্যাটো’ কৌশলে ভিঞ্চি মোনালিসাকে আঁকেন। ঝাপসা এক ধরণের ইফেক্ট তৈরি করে রংয়ের পাতলা অনেকগুলো স্তর তৈরি করেন । এর ফলেই ছবিতে সৃষ্টি হয় এই রহস্যময়তা।
আপনার মতামত লিখুন :