শিরোনাম
◈ ব্যাংক না দিলেও খোলাবাজারে চড়া দামে নতুন টাকা ◈ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ায় দুরবস্থায় শিল্পকারখানা ◈ দ্রুত নির্বাচন করা, সাথে সংস্কারটা যত দ্রুত করা যায় সে কথাই বলেছি: মির্জা ফখরুল  ◈ সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে এক দিন ছুটি ঘোষণা ◈ বাংলাদেশ যে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে পাশে থাকবে জাতিসংঘ: আন্তোনিও গুতেরেস ◈ পাকিস্তান থেকে এল ২৬ হাজার টন চাল ◈ আস্থাহীনতায় রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে! ◈ রাজশাহীতে র‌্যাবের অভিযানে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার ◈ ঠাকুরগাঁওয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোতে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে ভারতীয় সিম! ◈ রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় ৬ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০২:০২ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০২:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেনো পুড়েছিলো ট্রয়

কাজী নুসরাত : প্রাচীন এশিয়া মাইনরে বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়া রাজ্যেই ছিল হেলেনের প্রেমে পুড়ে যাওয়া ইতিহাসখ্যাত সেই ট্রয় নগরী। এখানকার রাজা ছিলেন প্রিয়াম এবং রাণী হেকবা। তাদের পুত্র প্যারিসই ট্রয় যুদ্ধের মূল নায়ক। রাজপুত্র প্যারিস, গ্রিসের স্পার্টা রাজ্যের রাজা মেনেলাস এর স্ত্রী হেলেন এর প্রেমে বিগলিত হয়ে পড়েন।

কিন্তু রাজার প্রাসাদ থেকে একজন রাণীকে নিয়ে পালানো তো সহজ কথা নয়। তবে, রানি নিজেই প্যারিসের হাত ধরে প্রাসাদ ছেড়ে পালান।

তবে ইতিহাসে ট্রয় যুদ্ধের বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়েছে। সাহিত্যেও নানা রঙ ছড়িয়েছে ঐতিহাসিক এ প্রেমকাহিনী। এ যুদ্ধ বিষয়ে গ্রিক মিথোলজিতে বলা হয়েছে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ফলে দেবতাদের প্রধান জিউস চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি চান জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে। আর এজন্যই একটি যুদ্ধ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা তার মাথায় আসে। সেখান থেকেই ট্রয় যুদ্ধের সূত্রপাত।

হোমারের লেখায় মূলত ফুটে উঠেছে, প্যারিস আর হেলেন এর ভালোবাসার অনবদ্য এক রূপ। হেলেন প্যারিসকে এতোটাই ভালোবাসতো যে, স্বামী মেনেলাস আর স্পার্টার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যেতে একটুও বাঁধেনি তার। আর তাই প্রতারিত মেনেলাস তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ট্রয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়েন। প্রায় দশ বছর স্থায়ী সে যুদ্ধে ধ্বংস হয় ঐতিহাসিক ট্রয় নগরী।

গ্রিক পুরানের কাহিনী অনুযায়ী, দেবী আফ্রোদিতি রাজপুত্র প্যারিসকে এক বিশেষ বর দিলেন, এই বর ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর ভালোবাসা। আর সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মানবী ছিলেন হেলেন, যার রূপের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ ছিলো। কিন্তু হেলেন তখন ছিলেন স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। অন্যের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আফ্রোদিতির দেওয়া বরে হেলেন তার মনপ্রাণ সঁপে দিলেন ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিসকে। দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসায় এক রাতের আঁধারে দুজনে হাত ধরে পালিয়ে চলে আসেন ট্রয় নগরে।

এদিকে রানি হেলেন পালিয়ে যাওয়ার পরে স্পার্টার রাজা মেনেলাস জ্বলছিলো ক্রোধের আগুনে। মেনেলাস তার ভাই আগামেমননকে আহ্বান করলেন তার পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। আগামেনন ছিলেন পার্শ্ববর্তী মাইসিন রাজ্যের রাজা। ভাইয়ের স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য আগামেমনন তার বিশাল অ্যাশিয়ান্স দল নিয়ে রওনা দিলেন ট্রয়ের উদ্দেশ্যে। এরপর ট্রয় নগরের সম্মুখে শুরু হয় এক ভয়ংকর যুদ্ধ। প্রায় দশ বছর ধরে চলে এই যুদ্ধ। আগামেমননের সৈন্যবাহিনী চারদিক দিয়ে ট্রয় নগরীকে ঘিরে রাখলো। এদিকে ট্রয়ের বাসিন্দারা কিছুতেই হেলেনকে ফেরত দিতে রাজি হলো না। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে মারা গেলেন অ্যাশিয়ান্স বীর অ্যাকিলিস, অ্যাজাক্স এবং ট্রোজান বীর প্যারিস ও তার ভাই হেক্টর। কিন্তু দুই পক্ষ ছিল শক্তিতে সমান। ফলে যুদ্ধে কারো জয় বা পরাজয় হলো না। এরপরই ঘটলো সেই ট্রোজান হর্স নামক বিশাল আকৃতির কাঠের ঘোড়ার ঘটনা।

দশ বছরের চেষ্টার পরও যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পেরে গ্রিক যোদ্ধারা এক চাতুরির আশ্রয় নিল। এই চাতুরির নামই হচ্ছে ট্রোজান হর্স। তারা সবার অজান্তে কালো রঙের বিশাল আকৃতির এক ঘোড়া এনে ট্রয় নগরির সম্মুখে রেখে গেলো। ট্রয়ের মানুষ ভাবলো স্পারটানরা যুদ্ধে হার মেনে নিয়েছে আর তাদের জন্য উপহার হিসেবে এই ঘোড়া রেখে গেছে। তারা ঘোড়াটিকে ট্রয় নগরীর ভেতরে নিয়ে এলো। আর এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।

মাঝরাতে যখন ট্রয়ের বাসিন্দারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন এই কাঠের ঘোড়া খুলে গেলো। আর ভেতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে এলো স্পারটান যোদ্ধারা। নগরে ঢোকার পর অ্যাশিয়ান্সরা সামনে যাকে পেলো, তাকেই জবাই করা শুরু করলো। শুধুমাত্র কয়েকজন শিশু আর নারী রক্ষা পেলেন, যাদেরকে পরে দাসদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্যারিস-হেলেনের প্রেমে ধ্বংস হলো ট্রয়।

প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতেন, ট্রয়ের যুদ্ধ একটা ঐতিহাসিক সত্য কাহিনী। তাদের ধারণা অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ বা ১৩০০ সালে। তবে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে বেশিরভাগ মানুষই এই বিশ্বাস থেকে সরে আসেন। সে সময় অনেক গবেষক বলেছেন, ট্রয় নগরী বা ট্রয়ের যুদ্ধ দুটোই ছিলো নিছক গল্পগাঁথা। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব কখনও ছিল না। কিন্তু ১৮৬৮ সালে হেইনরিখ শ্লিম্যান এবং ফ্র্যাঙ্ক ক্যাল্ভার্ট নামক দুজন প্রত্নতাত্ত্বিক এক অবিশ্বাস্য বিষয় আবিষ্কার করেন। তারা তুরস্কের হিসার্লিক অঞ্চলে এক প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। ধ্বংসাবশেষ থেকে যা কিছু উদ্ধার করা গেছে, তার সাথে প্রাচীন ট্রয় নগরীর বর্ণনার অনেক মিল পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, এটাই সেই গ্রিক পুরানে বর্ণিত ঐতিহাসিক ট্রয় নগরী। তাদের এই আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই সবাই আবার নতুন করে ট্রয়ের যুদ্ধের কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ট্রয় ছাড়াও গ্রিক মিথোলজিতে উল্লেখিত আরও অনেক নগরীর অবস্থান পরবর্তীকালে খুঁজে পাওয়া গেছে। গ্রিক সাহিত্য এবং রোমান সাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ট্রয়ের যুদ্ধ। মহাকবি হোমারের দুই মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসির কারণে এই রোমান্টিক ট্র্যাজেডি অমর হয়ে আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়