নিউজ ডেস্ক : আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের মেঘালয় হতে বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানি নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। এতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশি আমদানিকারকরাও পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর এবং সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, বাগলি ও চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের ৫ শতাধিক কয়লা ব্যবসায়ী। শত কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) ও ডিউটি ফি মিলিয়ে তাদের অন্তত দেড়শ কোটি টাকা আটকা আছে বলে জানিয়েছেন সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি চন্দন সাহা।
সুনামগঞ্জের কয়লা ব্যবসায়ী তারেক আহমদ বলেন, ‘আমরা বড় বিপাকে আছি। ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনায় শেষ হয়ে যাচ্ছি। এলসি খুলে কয়লা আমদানি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা দিশাহারা। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে বেঁচে থাকতে পারবো।’ এদিকে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার রয়েছেন এই চারটি শুল্ক স্টেশনের ৮-১০ হাজার শ্রমিক। বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের শ্রমিক নিরঞ্জন দাশ বলেন, ‘আমরা এখন পথে বসে গেছি। কোনো কাজ নাই, দু বেলা খাওয়াও হয় না। আমাদের সামনে অন্ধকার।’
এ ব্যাপারে সিলেট কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার ড. গোলাম মুনির বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত। ব্যবসায়ীরা তাদের টাকার জন্য আবেদন করেছেন। এই টাকা অন্যান্য পণ্য আমদানিতে ডাইভার্ট করা যাবে। তবে এটা এনবিআরের সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা যেন এনবিআরের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেন।
জানা গেছে, সিলেট সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয় ৯০ দশকের দিকে। টানা দুই দশকে কয়লা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন সেখানকার শত শত ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে ১৫-২০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে ভারতের মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সে দেশের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। অনেক চেষ্টার পর গত বছর ২০ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের তিনটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আবার কয়লা আমদানি শুরু হয়। কিন্তু ২৫ দিনের মাথায় ১৫ জানুয়ারি থেকে আবার হঠাত্ করেই বন্ধ হয়ে যায় কয়লা আমদানি। বর্তমানে শুধুমাত্র সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা আসছে।
চলছে চোরাচালান: সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তপথে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকলেও চোরাচালান চক্র বেশ সক্রিয়। তাহিরপুর সীমান্তের লাউড়েরগড়, চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও ও বীরেন্দ্রনগর বিওপির বিজিবির আওতাভুক্ত সীমান্ত পথে একাধিক চোরাচালানী কয়লা ও চুনাপাথর নিয়ে আসছে। গত ৬ মাসে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা সোয়া ৩ লাখ কেজি ভারতীয় কয়লা ও সাড়ে ৩ হাজার ঘনফুট চুনাপাথর জব্দ করেছে বিজিবি। এসব চোরাই মালামালের মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :