আলী রীয়াজ : নুসরাতকে ‘মা’, ‘বোন’, ‘কন্যা’ বলার লোকের অভাব নেই, অভাব হচ্ছে একজন ‘নাগরিক’ হিসেবে নুসরাতের নিরাপত্তা বিধান যাদের দায়িত্ব ছিলোÑযারা সেই দায়িত্ব পালনে হয় অনীহ অথবা ব্যর্থ তাদের দিকে অঙ্গুলি সংকেত করার, তাদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর শক্তির কোনো লক্ষণ নেই। আপনার আবেগ বুঝতে পারি না তা নয়, কিন্তু নুসরাত তো একজন নয়, চারপাশে তাকানÑকিসের শক্তিতে অপরাধীরা ও অভিযুক্তরা টিকে থাকে, তর্জনী তুলে শাসায় বুঝতে পারেন না নাকি বুঝতে চান না?
নুসরাতের হত্যাকা-ের আগে নুসরাতের জীবনে কী ঘটেছিলো আমরা কী তা জানি না? আরো অনেকেই কী এই রকম পরিস্থিতির শিকার নয়? মৃত্যুর পরে শোকে বিহ্বল হন, কিন্তু যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য কী করছেন? মৃত ‘বোনের’ জন্য আপনার ভালোবাসা সমান হোক এখনো যে জীবিত তার জন্য। পুলিশ, প্রশাসনের পেছনে কী থাকে, কেন এই আচরণ বুঝতে কী রকেট-বিজ্ঞানী হতে হয়?
বিচারহীনতার সংস্কৃতির ব্যাপারে বিকারহীন থাকাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। গোটা ব্যবস্থার ধ্বংস সাধনের অংশীদাররা, যারা ওই ধ্বংস সাধনের সময় হাততালি দিয়ে উল্লাস করেছেন তারা কী করে এই মাতমে যোগ দেন তাতো বুঝতে পারি না। কেউ কেউ এর মধ্যেই ‘হারকিউলিসে’র জন্য প্রার্থনা শুরু করেছেন, বৈধতা দিচ্ছেন, আইনের শাসন নয়, নাগরিকের নিরাপত্তা নয়, তারা চান আর সব ঠিক রেখে একজন-দুইজনকে নিশ্চিহ্ন করলেই হবে।
পুরুষতন্ত্রের শক্তি ক্ষমতার বাইরে নয়, রাষ্ট্রের বাইরে নয়। তদুপরি ক্ষমতাসীনরা যখন যেনতেন প্রকারে টিকতে চান, তখন সর্বত্রই যে যার মতো করেই ভাগবাটোয়ারা করেÑতাতে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়, তার পরিণতি হচ্ছে এই অবস্থা। নাগরিকের অধিকার, আইনের শাসন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান, জবাবদিহি ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে আপনার ‘বোনের’ হত্যার বিচার হতে পারে কিনা সেটা ভাবুন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :