স্বপন দেব : আধাপাকা বলতে বোরো ধানের শীষে মাত্র সোনালী রং ধরতে শুরু করেছে। ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ী ঢল আর শিলাবৃষ্টির কারণে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আধা পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি তীরের কৃষকরা। ইতোমধ্যে ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে আধাপাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক আকমল আলী, আজমল আলী, মছব্বির আলী, শাকিল মিয়া, বিলকুড়ি বিলের তীরের কৃষক আব্দুর রহিম, সালেহ মিয়া প্রমূখ জানান, এবার আগাম বৃষ্টিতে ধানের শীষ এসেছে সময়মত। কিন্তু ৩১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিপাত, ঝড় আর সেই সাথে শিলাবৃষ্টিতে ইতোমধ্যে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ১০-১১ দিনে যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তাতে ধানের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
ইতোমধ্যে স্থানীয় পাহাড়ী ছড়া দিয়ে পানি নামতে শুরু করেছে। সেইসাথে পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাকালুকির বিলগুলো ডুবতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে হাওরে বাথানে থাকা গরু-মহিষগুলো বাথানিরা বাড়িতে নিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের সাথে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ঢল চোখের সামনে থেকে কৃষকের স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারে যেকোন সময়।
হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী অংশে এবার বোরো আবাদ হয় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি। কুলাউড়া কৃষি অফিসার মো. জগলুল হায়দার জানান, তার উপজেলায় এবার ৬ হাজার ৭শ হেক্টর বোরো আবাদের টার্গেট করা হয়। কিন্তু একশ হেক্টর বেশি অর্থাৎ ৬ হাজার ৮শ হেক্টর বোরো আবাদ হয়।
বড়লেখা কৃষি অফিসার দেবল সরকার জানান, বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও ১০ হেক্টর বেশি আবাদ করেছেন কৃষকরা। জড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় জানান, উপজেলা বোরো আবাদের টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর। বোরো আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর বেশি অর্থাৎ ৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর।
হাওর পাড়ের উপজেলা কৃষি অফিসারদের তথ্যমতে, এবার বোরোর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড়শ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত বোরো আবাদ হয়েছে। মাঘের শেষে এবং চৈত্র মাসে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের ফলনও হয়েছিল আশাতীত। এবার নতুন জাতের ব্রি-৭৪ জাতের বোরো ধানের বেশি চাষ করা হয়েছে। ব্রি-২৮ কিছু কিছু কাটা শুরু হলেও মধ্য এপ্রিল থেকে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। হাওর তীরের কৃষকের গোলায় বোরো উঠা নির্ভর করে প্রকৃতির উপর। কেননা এখানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ী ঢল নেমেই প্রথমে বোরো ধান তলিয়ে দেয়। ফলে কৃষকের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা থাকাটা স্বাভাবিক।
আপনার মতামত লিখুন :