আলী রীয়াজ : ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে বাঁচানো যায়নি। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। রাফিকে বাঁচাতে না পারাটাই স্বাভাবিক। এই না পারাটা কেবল চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিবেচনায় বলছি না, সেই চেষ্টা চিকিৎসকরা করেছেন। আমি অনুমান করি তারা যতোটা পেরেছেন করেছেন। কিন্তু যে কারণে নুসরাত মারা গেছেন সেই কারণগুলো যেহেতু সমাজে প্রতিদিন বিস্তার লাভ করছে সেহেতু তাকে যে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না সেটাই স্বাভাবিক।
যারা গত কয়েকদিন ধরে ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করেছেন তারা বুঝতে পারবেনÑএর পেছনে আছে স্থানীয় রাজনীতির কলুষতা, আছে ক্ষমতা অর্জন এবং তা ধরে রাখার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, আছে অর্থের দৌরাত্ম্য, আছে আইনের শাসনের অভাব, আছে জবাবদিহির অভাব, আছে রাজনৈতিক সুবিধার আশায় অতিরক্ষণশীল ধর্মের ব্যাখ্যাকারীদের প্রতি ক্ষমতাসীনদের পক্ষপাত যার ফলে সমাজে এমন সব ব্যাখ্যা এবং কাজকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে যা আর যাই হোক ধর্ম বলে বিবেচিত হতে পারে না।
নুসরাতের গায়ে যে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে সেই আগুন আসলে লাগানো হয়েছে সমাজের গায়ে। এটাই তো দেখতে পাই যে, সেই আগুনে নুসরাত দগ্ধ হন, কিন্তু তার আঁচ সমাজের সুবিধাভোগীদের গায়ে লাগে না। তারা দূরে থাকেন, কিন্তু আরেকটি আগুনের, আরেকটি দুর্ঘটনার পরিবেশ তৈরি করেন। সুস্থ রাজনীতি নেই বলে স্থানীয় স্বার্থান্ধদের কলুষিত প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার নগ্ন প্রকাশকে আমরা মেনে নিয়েছি রাজনীতি বলে। অর্থের হাত বদল, সুবিধার ভাগ বাটোয়ারাকে আমরা দলের ভেতরকার অন্তর্দ্বন্দ্ব বলে বিবেচনা করেছি। আইনের শাসন নেই বলে একজন নুসরাতের পরিবার কিংবা আরও অসংখ্য পরিবার প্রতিদিন বলছেন, ‘পুলিশ মামলা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে’।
আমরা তাতে বিস্মিত হচ্ছি না। জবাবদিহি নেইÑকোনো অগ্নিকা-ের নেই, সড়ক দুর্ঘটনার নেই, বিচারবহির্ভূত হত্যার নেই, অধিকার হরণের নেই। কতো নাম শুনতে চাই, কতো নাম মনে করতে পারি? নুসরাতকে বাঁচানো যায়নি, কেননা তার মৃত্যুর, তার হত্যার এই আয়োজন আগেই হয়েছে, এখনো হচ্ছে। একটি ঘটনা বলে একে আমরা বিস্মৃত হবো বলেই মনে হয়, কিন্তু যেসব কারণের ফল এই হত্যাকা-, আরও অনেক হত্যাকা- তা আর কতোদিন আমরা বিস্মৃত থাকবো? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :