প্রভাষ আমিন : বাংলাদেশের মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদদের চক্ষুলজ্জা একটু কম সেটা আমরা সবাই জানি। মেনেও নিয়েছি। চক্ষুলজ্জা থাকলে ভালো রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলে লজ্জার পর্দাটা আস্তে আস্তে খসে যায়। কিন্তু তাই বলে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর লাজশরমের বালাই থাকবে না, এটা ভাবিনি কখনো। বর্তমান মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে তিন মাস হলো। বর্তমান মন্ত্রিসভায় সদস্য আছেন ৪৬ জন।
অথচ তাদের বসবাসের জন্য সরকারি বাসা রয়েছে মাত্র ২৩টি। ফলে মন্ত্রিসভার অন্তত ২৩ জনেরই কোনো সরকারি বাসা নেই। বাকি ২৩ জন মন্ত্রী সরকারি বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু মজাটা হলো এই ২৩ জনের মধ্যে মাত্র ১১ জন বাসায় উঠতে পেরেছেন। বাকি ১২ জন বাসা বরাদ্দ পেলেও তাতে উঠতে পারেননি। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর শুনলে আপনার পিলে চমকে যাবে। কারণ নতুন মন্ত্রীদের বরাদ্দ বাসায় এখনও বাস করছেন পুরোনো মন্ত্রীরা। না, আপনি ভুল পড়েননি। তিনমাস আগে মন্ত্রিত্ব হারালেও বাসার মায়া ছাড়তে পারেননি তারা। নাকি তারা ভেবেছেন, একবার মন্ত্রী হলে বাসা আজীবনের জন্য বরাদ্দ? কিন্তু তাদের জানার কথা মন্ত্রিত্ব কোনো চিরস্থায়ী পদ নয়। এটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। মন্ত্রিত্ব হারানোর সাথে সাথে তাদের বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা। তবু নতুন বাসা খোঁজা, গোছগাছ করার জন্য বড় জোর একমাস সময় পেতে পারেন। তাই বলে তিনমাস! ন্যূনতম চক্ষুলজ্জা থাকলে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর আর পুরোনো বাসায় তাদের ফিরে যাওয়ার কথা নয়। ফার্নিচার পরে আনিয়ে নেয়া যেতে পারতো। সেটা তো করেনইনি। উল্টো এখন তাদের নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হচ্ছে। হাইকোর্টে রিট হচ্ছে। দখলদার সাবেক মন্ত্রীদের লজ্জা না থাকলেও, আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে। এখনকি হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ পাঠিয়ে উচ্ছেদ করতে হবে?
সাবেক মন্ত্রীরা বাসা ছাড়েননি বলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেশিরভাগকেই নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকতে হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হক তো সাভার থেকে প্রতিদিন অফিস করছেন। মন্ত্রীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। দৈনিক সমকালে ছাপা হওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে যারা এখনও বাসা ছাড়েননি তাদের নামগুলো একটু জেনে রাখুন : সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মজিবুল হক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার। আমার আর কিছু বলার নেই, লেখার নেই। আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :