রমজান আলী : বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ, রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় জিডিপির অগ্রগতি হচ্ছে। তবে জিডিপির অর্জন ধরে রাখতে সরকারি ব্যাংক, করপোরেটের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাচাই করে ঋণ দিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগামী, যা গর্ব করার মতো। কিন্তু টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নজর দিতে হবে। প্রবাসী আয়ের প্রভাবে ব্যক্তি খাতে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগের কারণেই মূলত প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে। গড় আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে আয় বৈষম্য কমাতে হবে।
তারা মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে, রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ব্যক্তি খাতের উন্নতি নিশ্চিতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সরকারের ব্যয় নির্বাহ করতে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও গুরুত্ব দিতে হবে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ ধারা ধরে রাখা সম্ভব হবে।
এ বিষয় সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক। এ ক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাববিদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যা আসলেই চ্যলেঞ্জিং। এই ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনীতির সূচকগুলোকে ঠিক মতো তদারকি করতে হবে। তা না হলে এ ধারার ব্যত্যয় ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ন্যূনতম ৭ শতাংশ থাকবে বলে আমরা মনে করছি। তবে এর জন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যাংকিং খাত এবং রাজস্ব খাত। এ দুই খাতে সংস্কার আনতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থনীতির প্রত্যেকটি খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি ভালো। মূল খাতে উৎপাদন বাড়ায় রফতানি ও বিনিয়োগ বেড়েছে। সে জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো।
উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে প্রাক্কলন করেছে, এতে চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে সম্প্রতি চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি হওয়ার আভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, এশিয়ার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
আপনার মতামত লিখুন :