শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৫১ রাত
আপডেট : ০৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০৩:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পর্নোস্টার হওয়ার যৌক্তিকতা কী?

অমিতাভ চৌধুরী : নিজেদের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে কেউ একজন বলে উঠলো যে, ‘আমি একজন পর্নোস্টার হতে চাই। আপনি কথাটি কেমনভাবে গ্রহণ করবেন? ‘পর্নোস্টার’ কথাটি শুনতে আপনি নিশ্চয়ই প্রস্তুত ছিলেন না। আমার প্রশ্ন, ‘কিন্তু কেন’? পর্নোগ্রাফি আমাদের নৈতিক অবনতি ঘটায় এবং ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুযায়ী এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে অনেকটা অশোভনও করে তোলে! আমরা সকলেই হয়তো কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবন জীবিকা নির্ভর করার পাশাপাশি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকি। এটা নিশ্চয় সঠিক চিন্তা! জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন বা উচ্চাশা সবারই থাকে।

কিন্তু সে বড় হওয়াটা পর্নোগ্রাফির মতো নিষিদ্ধ যৌন পদ্ধতির মাধ্যমে কেন? কেন নয়? আপনি পর্নোগ্রাফি দেখেন? হয়তো আপনি দেখেন না। কিন্তু আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ যে দেখেন, আমি তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। যদি সেটা না হতো তাহলে পর্নোসাইডের অনলাইন পোর্টালগুলোতে এতো ভিউ আসতো না। আচ্ছা, অন্য একটা কথায় আসি। যদিও কথাগুলো একটু সেনসিটিভ। আপনি, আপনারা বা আপনাদের মধ্যে কেউ অথবা কয়েকজন পতিতালয়ে গেছেন কখনো? আচ্ছা, পতিতালয় কথাটি শুনতে কেমন যেন লাগছে? আচ্ছার ওটাও বাদ দিলাম। কোনো মেয়েকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে টাকার বিনিময়ে আপনার সময় অতিবাহিত করছেন? আপনাদের উত্তর না হতে পারে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাদের উত্তরটা সরাসরি হ্যা না হলেও মনে মনে হ্যাঁ বলেই ফেলেছেন!

যদি তা না হতো তাহলে সারাদেশে এতো পতিতালয়, যৌনকর্মী, আবাসিক হোটেল থাকতো না। আপনি জানেন কি, সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা কোনটি? সবচেয়ে বেশি ডলার আয় হয় কোন ব্যবসায়? অনলাইনে সবচেয়ে বেশি ভিউ আসে কোন ভিডিওগুলোতে? এই সবগুলোর উত্তর একটাই ‘পর্নো’। আপনি হয়তো বলবেন, এটি অবৈধ ব্যবসায়। আমিও আপনার সাথে সহমত। কিন্তু এগুলো বন্ধ কেন হচ্ছে না? আপনি বা আপনারা এগুলো কেন দেখছেন? পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি বহন, বিনিময়, বহফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা, বিক্রি প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা এমন যে, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য-চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়্যালচিত্র, স্থিরচিত্র, অঙ্কিত চিত্রাবলি বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য বিষয়, যার কোনো শৈল্পিকমূল্য নেই, তা পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে।

অধিকন্তু, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, পত্র-পত্রিকা, ভাস্কর্য, কল্প-মূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা প্রচারপত্র পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসবের নেগেটিভ বা সফটভার্সনও পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য হবে। এই আইনানুযায়ী পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শন বেআইনী ও নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদনের জন্য শাস্তির বিবিধ বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজতর করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রায় অন্তর্জাল আমাদের হাতের মুঠোয়, যার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি। গুগুল-এর সাহায্যে আমরা ঘরে বসে অনেক কিছুই পেতে পারি।

এক আন্তর্জাতিক তথ্যানুযায়ী জানতে পারা যায় যে, অন্তর্জাণে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয় পর্নোসাইডগুলো। আপনি অন্তর্জাল থেকে অথবা কম্পিউটার থেকে আপনার বহফোন অথবা পেইনড্রাইভে ‘পর্নো’ নিয়ে আসছেন আর সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছেন। ভাবছেন, কেউ দেখতে পাচ্ছে না তাই না? আমার জানা এমন অনেকেই আছে, যারা প্রথম পর্নোভিডিও দেখেছে তাদের বাবা অথবা নিকটাত্মীয়ের বহফোন থেকে। বর্তমানে পর্নো মানুষের জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সেটা আইনগত দিক দিয়ে দ-নীয় অপরাধ। পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২-এর যদি সঠিক ব্যবহার করা হতো, তাহলে অবাধে পর্নো সংগ্রহ, সরবরাহ, সংরক্ষণ করা হয়তো কিছুটা বন্ধ হতো। তবে শুধু আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি থেকে মান্ষুকে সরানো আদৌও সম্ভব নয়। কারণ পর্নো মানুষের হাতের মুঠোয়।

যে কেউ চাইলেই পর্নো দেখতে পারে অন্তর্জাল থেকে। তাই পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকলকে কাজ করতে হবে। সরকারের অবশ্যই উচিত হবে পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২ প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের সাথে পর্নোগ্রাফির কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা। পর্নোগ্রাফি প্রতিনিয়ত মানুষের মস্তিষ্ককে গ্রাস করছে। ধীরে ধীরে মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি ধ্বংস করছে, যার ফলে সমাজে বিভিন্ন যৌন অপরাধমূলক কাজ বেড়েই চলছে। এর থেকে শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। এভাবে যদি অবাধে যৌনাচার ও পর্নোর রমরমা ব্যবসা চলতে থাকে, তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আধুনিকতার নামে আপনার-আমার সন্তানেরা ডাক্তার, শিক্ষক, পুলিশ, পাইলট ইত্যাদি হওয়ার বদলে এটা বলে উঠবে যে, ‘আমি একজন পর্নোস্টার হতে চাই’।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়