শাহীন চৌধুরী: দেশে উৎপাদন এবং বিতরণ বা নতুন সংযোগের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি হলেও গ্রিড বা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। এই বিভাগে বর্তমানে ২৬টি প্রকল্প চালু রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ। আর এ কারনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কর্মসূচির সাফল্য নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো ২০১২ সালকে ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বছর’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই ঘোষণা পরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরপর আবারও ২০১৫ সালকে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বছর ঘোষণা করা হয়। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও তা চাহিদার সমান না হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি। ২০১৯-এ এসে বলা হচ্ছে, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, সঞ্চালান লাইন নির্মাণের বড় প্রকল্পগুলোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ আগামী বছর বা তারও পরে শেষ হবে বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। আবার কোন কোন প্রকল্পের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি। আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো হবে। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি আগামী বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা। পৌনে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৭ ভাগ। আর বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ হয়েছে ৪ ভাগ। ৩৩ মাসে মাত্র ১৭ ভাগ কাজ হওয়া প্রকল্পটি শেষ করতে হলে আগামী ১৫ মাসে ৮৩ ভাগ কাজ করতে হবে।
সূত্রমতে, ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র দুই মাস। জানুয়ারি ২০১৬-তে কাজ শুরু হওয়া প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪৩ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২৭ ভাগ দেখাচ্ছে পিজিসিবি। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে ৫৭ ভাগ কাজ শেষ করা অনিশ্চিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী এবং ঈশ্বরদীর মধ্যে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া, গোল্লামারি ও গোপালগঞ্জের মধ্যে ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, ভাংগুরা এবং বাঘাবাড়ির মধ্যে ১৩২ কেভি, ভাংগুরা, সাতক্ষীরা ও মাদারীপুর এলাকায় সরবরাহ বাড়ানো, রাজশাহী ও নাটোরে লোডশেডিং কমানো, রংপুরের চাহিদা প‚রণ করার কথা।
একইভাবে গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য গ্রিড সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন লাইনের সক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ক প্রকল্পটির কাজ গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৮৫ ভাগ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশনের উৎপাদন বাড়ানো, ঢাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও ভালো করা এবং কিছু পুরনো সঞ্চালন লাইনের মেরামত করা হবে। ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ চলতি বছর জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এর ভৌতিক অগ্রগতি ৬৭ ভাগ আর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২১ ভাগ। এই প্রকল্পের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা কঠিন হবে। পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রজেক্টেরও। এটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩১ ভাগ।
এ ধরনের অন্য প্রকল্পগুলো হলো- পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, মাতারবাড়ি কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, ভেড়ামারা-বহরামপুর দ্বিতীয় ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, আশুগঞ্জের পুরনো ১৩২ কেভি সাবস্টেশন পরিবর্তন এবং সাউথইস্ট ট্রান্সমিশন গ্রিড বর্ধিত প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।
এ বিষয়ে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আলবেরুনী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন শুল্ক আইনের কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে সময় লেগে গেছে। তবে আমরা কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। আগামী জুনের মধ্যে যেসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা সেগুলো মে মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আপনার মতামত লিখুন :