আকতার বানু আল্পনা
আপনি নিজের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি যতো ভালোভাবে বোঝেন, অন্য কেউ ততোটা বোঝে না। ততোটা পরওয়াও করে না। কারণ সবাই নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়, হোক সেটা বাড়ির কাজ বা কর্মক্ষেত্রের।
আমরা রাতদিন স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়দের জন্য হাজার রকম কাজ করতে ব্যস্ত থাকি। ফলে নিজের পছন্দের কোনো কিছু করার জন্য আমাদের হাতে সময় থাকে না। কিন্তু হাজার কাজের মাঝেও আপনার নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো রাখার দায়িত্ব আপনারই। কী করে নিজেকে ভালো রাখা যায়, সে বিষয়ে আমরা মোটেই মনোযোগী নই। আমি নিজে বিজি থাকি। বলা ভালো, আমাকে বিজি থাকতে হয়। সংসার-সন্তান সামলাতে হয়। সকাল-বিকাল ক্লাস থাকে। ফলে কোনো কোনোদিন রাত আটটা/ন’টা পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। ক্লাস ছাড়াও অফিসিয়াল নানা কাজ থাকে। এতো কিছুর মধ্যেও আমি নিজের জন্য রোজ কিছু কাজ করি। যেমন : ১. সকালবেলা নাস্তার পর আমি কফি বানাই। বলাবাহুল্য, সে কফি হয় দুধ-চিনি দেয়া অতি অস্বাস্থ্যকর বিশাল বড় মগের এক মগ কফি। আমি কফির মগ হাতে নিয়ে বাসার বাইরে চলে আসি। বাড়ির চারপাশ ঘুরে ঘুরে গাছপালা দেখতে দেখতে কফি খাই। আমার বাড়ির চারপাশ যেহেতু নিরিবিলি, তাই আমি কফি খেতে খেতে বাসার সামনের রাস্তা পর্যন্ত চলে যাই। এই কাজটি আমার খুবই পছন্দ। ২. কফি খাওয়া শেষ হলে আমি আমার বাসার বারান্দার গাছগুলোতে (ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শ’দুয়েক টবে অনেকগুলো ইনডোর প্ল্যান্ট আছে) পানি দেই। আগাছা সাফ করি। এই কাজটিও আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। ৩. সময় পেলেই আমি গান শুনি। অফিসে যাবার জন্য রেডি হবার আগে গান ছাড়ি। গাড়িতে যেতে যেতে, কোথাও অলস বসে থাকলে, হাঁটার সময় আমি গান শুনি। গান আমার দুশ্চিন্তা, মন খারাপ, হতাশা দূর করে। ৪. নিজেকে যথাসম্ভব সুন্দর লাগার জন্য আমি প্রায় সময়ই সাজগোজ করি। কারণ সাজলে নিজেকে আমার নিজেরই ভালো লাগে। অন্যের চোখে নিজেকে ভালো লাগানোর জন্য আমি সাজগোজ করি না। যদিও আমার মনে হয়, সেটা করা উচিত। মানুষের সাজগোজ এমন হওয়া উচিত, যেন তাকে দেখে তার নিজের ও তার চারপাশের মানুষদের মন ভালো হয়ে যায়। যেমনÑডাক্তার-নার্সকে দেখে রোগীর, শিক্ষককে দেখে শিক্ষার্থীদের, কর্মচারীদের দেখে বসের ইত্যাদি। ৪. সারাদিনের কাজের ফাঁকে, অবসরে বা সব কাজ শেষে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমি কিছু না কিছু লিখি। সেগুলো ফেসবুকে বা নানা জায়গায় পোস্ট করি। পাঠকের প্রতিক্রিয়া দেখি। এটা আমার ভীষণ ভালোলাগার একটি কাজ। ৫. প্রায়ই পরিবার নিয়ে কাছে বা দূরে কোথাও, আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যাই। শপিং করতে যাই বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। এটি আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। আন্তরিকতা, ভালোবাসা বাড়ায়।
আপনারাও নিজেকে ভালো রাখার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। যেমনÑবাগান করুন। বাসায় ইনডোর প্ল্যান্ট লাগালে বা বাগান করলে তা মনের খোরাক জোগায়, অবসর সময় ভালো কাটায়, আপনার মনের সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটায়। প্রাণী বা গাছের যতœ নিলে তা আমাদের অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে, দায়িত্বশীলতা শেখায়। তাছাড়া গাছ ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, অন্যের কাছে আপনার রুচিশীল ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে।
গান শুনুন। বেড়াতে যান। নতুন নতুন রান্না শিখুন। সেলাই করুন। রোজ নতুন কিছু করুন। বই পড়ুন, নাটক-সিনেমা দেখুন। কাছাকাছি কোনো নদীর ধার বা সুন্দর জায়গা দেখতে যান । কোনো শখ, যেটা অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছেন, সেটা আবার করুন। গান, নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, ছবি তোলা ইত্যাদি। প্রতিদিন সৃষ্টিশীল কিছু না কিছু করুন। না জানলে কম্পিউটার শিখতে পারেন। যে যা বলে বলুক, আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন। পারলে লেখালেখি করুন। বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে কথা বলুন, দেখা করুন। পরচর্চা ছেড়ে দিন। খামাখা অন্যের বিষয়ে নাক গলিয়ে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।
সর্বোপরি, অল্প হলেও সারাদিনের মধ্যে নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। সেসময়ে নিজের পছন্দের কোনো কাজ করুন। মেডিটেশন করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন। ইত্যাদি বা যা আপনার ভালো লাগে।
এ প্রসঙ্গে একটা কৌতুক শুনুন। এক স্বামীকে চা খেতে দিয়ে স্ত্রী বললো, ‘তুমি টিভিতে আমার পছন্দের চ্যানেলগুলো লক করে রেখেছো কেন?’ স্বামী দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বললো, ‘তোমার পছন্দের চ্যানেল দেখতে না পেয়ে তুমি যখন রাগে ফুঁসতে থাকো, তখন তোমার গাল লাল হয়ে যায়। ওটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে, তাই।’ শুনে স্ত্রীর ভীষণ রাগ হলো। সে তখন গরম চা স্বামীর মাথায় ঢেলে দিলো। স্বামী রেগে গিয়ে বললো, ‘এটা কেন করলে?’ স্ত্রী শান্তভাবে বললো, ‘তুমি যখন রেগে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকাও, ওটা দেখতে আমারও খুব ভালো লাগে। তাই।’ ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :