ফাহিম বিজয়, নাঈম কামাল : রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে অভিজাত বনানী এলাকায় বৃহস্পতিবার একটি ভবনের অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। শ্রীলংকার একজন নাগরিক ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়েছেন। বিবিসি বলেছে, বনানীর হাইরাইজ ভবনগুলোর সবগুলোই একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। ফুটপাতে অসংখ্য দোকান ও ইন্টারনেটসহ নানা কিছুর তার। ভবনের সামনের রাস্তা সবসময়ই যানবাহনে ঠাঁসা থাকে।
ভবন থেকে প্রাণে বেচেঁ যাওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, আগুন লাগার পর তারা কোন ফায়ার সতর্ক সংকেত পাননি। প্রাণে বেচেঁ যাওয়া একব্যক্তির অডিও বার্তা বিবিসি প্রচার করে। ওই অডিও বার্তায় এক তরুণ মোবাইলে তার মাকে বার বার বলছিলো, মা আমি বেচেঁ গেছি। ভবন থেকে আমি ঠিকভাবে নেমেছি। বেচেঁ যাওয়া আরেক ব্যক্তি বলেন, আমি পাশের আহমেদ টাওয়ার দিয়ে নিচে নেমেছি।
আরিফ নামের আরো এক ব্যক্তি বলেন, আমি ছিলাম নবম তলায়। আগুন লাগার পর কোনো সতর্ক বার্তা পাইনি। বাচাঁর জন্য আমরা ওয়াশরুমে প্রবেশ করি। ধোঁয়ার কারণে সেখানেও আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। বিবিসি আরো জানায়, আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যে দমকল বাহিনীর কর্মীরা ভবনে আসেন এবং তারা পুরো ভবনে পানির লাইন তৈরি করেন। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো লাগোয়া। সেখানকার শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অবিলম্বে কাজে যোগ দেয়। ওই ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া আরেক ব্যক্তি বলেন, ভবনে কোনো বিকল্প সিঁড়ি ছিলো না এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিলো অপর্যাপ্ত।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ভবনের অনুমোদনের পর নকশা বা আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিনা তা দেখার কেউ নেই। শুভঙ্করের ফাঁকির দুটি জায়গা আমরা তৈরি করে বসে আছি। প্রথমত বিল্ডিংগুলো নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে কিন্তু অনুমোদনের পরে তা আইন/নিয়ম অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কিনা এবং সেই নির্মাণ কার্যক্রমগুলো পরবর্তী বছরগুলোতে পরিবর্তনহীনভাবে সংরক্ষিত আছে কিনা তা দেখভাল করার কোন সংস্থা নেই।
ফলে ভবনগুলো অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা সরকার জানে না। দ্বিতীয়ত প্রতিবছরই যারা অবিবেচক, লোভী তারাই অননুমোদিত ভাবে ভবনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। দেখা গেলো, একটি ভবনের মধ্যে একটি রেস্টুরেন্ট বানানো হলো। সেখানে একটি কিচেন থাকবেই। এগুলো তো ভবন অনুমোদনের সময় ছিলো না। এই যে কার্যক্রমগুলো, এগুলো দেখভাল করার জন্য কোন পদ্ধতিগত ব্যবস্থা সরকারের বা কোন সংস্থার নেই।
দমকল বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা সেলিম নেওয়াজ ভূঁইয়া বলেন, কোন বিল্ডিং ছয় তালার বেশি হলে আমরা তাকে হাইরাইজ বিল্ডিং মনে করি। এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না।
আন্ডারগ্রাউ-ে যে পানির ট্যাংক থাকার কথা তা কিন্তু নেই। পানি দূর থেকে টেনে এনে কাজ করতে হয়। শুধু চিৎকার করে তো আর লাভ হবে না। শুধু আইন তৈরি করেও লাভ হবে না। আলোচ্য বিল্ডিংটিতে ইমার্জেন্সি সিঁড়ি ছিলো না। প্রায় বিল্ডিংয়েই নেই। বিল্ডিংগুলো ফায়ার প্রটেক্টেট নয়। সম্প্রতি গার্মেন্টসগুলোতে কিছুটা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :