ডেস্ক রিপোর্ট : সমস্যার আবর্তে চট্টগ্রাম বসবাসের অযোগ্য হতে চলেছে। যানজটের নিত্যদুর্ভোগ আর জলজটের দুর্গতি পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রামবাসীর। এসব নিয়েই চসিক মেয়র, চউক চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীল কর্তারা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলছেন, শহরের এক নম্বর সমস্যা যানজট। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মতে, জলাবদ্ধতাই প্রধান সমস্যা। আর নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলছেন, যানজট ও জলজট- দুই-ই প্রধান সমস্যা শহরের। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অভিন্ন মত ব্যক্ত করে বলেছেন, সম্মিলিতভাবেই এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এদিকে পানি ও গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ আর পর্যটন খাতের সমস্যা নিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার বিবেচনা না করে অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণও চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগের কারণ বলে মনে করেন অভিজ্ঞজনেরা।
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নাকি সড়ক সংস্কার-সম্প্রসারণ আগে করা দরকার তা এখনো নির্ধারণ না হওয়ায় এর পরিণামে চট্টগ্রামের সংকট আরও তীব্রতর হবে নিকট ভবিষ্যতে- এমনই আশঙ্কার কথা জানান নগর পরিকল্পনাবিদসহ সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, মিরসরাই ও আনোয়ারায় দুটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক), চসিক, চউক ও চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন ও সেবা সংস্থাগুলো লাখো-কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও নগরবাসীর নানামাত্রিক সংকট কাটছে না, বরং বেড়েই চলেছে। শহরে চসিক মেয়রের পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, সবুজায়ন উদ্যোগ ও বিলবোর্ডমুক্ত নির্মল পরিবেশ এবং চউক চেয়ারম্যানের পতেঙ্গা সৈকতের নবনন্দন সৌকর্য দৃষ্টি কাড়লেও জনদুর্ভোগ কমেনি। নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেল ঘিরে চট্টগ্রামবাসী নতুন স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু এ প্রকল্পের সম্প্রসারণ ঘটলেও সংযুক্ত অবকাঠামো ঘিরে সমন্বিত পরিকল্পনা নেই।
বাড়ছে ঘরভাড়া, দ্রব্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয়। ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রজন্ম মাদকের করাল গ্রাসে। বাড়ছে কিশোর অপরাধ। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও শিক্ষাঙ্গনেও বাণিজ্যবেনিয়াদের খপ্পরে দুর্ভোগের কমতি নেই। বন্দর-শহর চট্টগ্রামে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য তো আছেই। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে প্রশাসনের সাফল্যের পরও বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথে প্রাত্যহিক যানজট আর অল্পবৃষ্টিতে জলজটের দুর্ভোগই বন্দরনগরের প্রধান সমস্যা বলে জানান ভুক্তভোগী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সব মিলিয়ে সমস্যার ঘূর্ণিপাকে জীবনযাত্রা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে বন্দরনগর চট্টগ্রামে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, ‘যানজট সমস্যার জন্য প্রধানত ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবই দায়ী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা নিজেরা যদি আইন মানেন ও ঠিকমতো প্রয়োগ করেন তবে যানজট আর থাকত না। আর গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই জলজট নিরসন সম্ভব।’
চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অন্তত তিন বছর লাগবে।’ তিনি জানান, প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় খাল খননসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের কাজ হবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। অন্যদিকে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেটের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবেশ রোধ করতে জলজট কমানোর প্রকল্পে কাজ করছে চউক।
এদিকে শহরজুড়ে যত্রতত্র যানবাহন দাঁড় করানো, রাস্তা আর ফুটপাথের ওপর পুলিশবক্স বসিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য ট্রাফিক পুলিশকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগী শহরবাসী। জনস্বার্থে এমন দুর্ভোগ মেটাতে দায়িত্বশীলরা উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ প্রসঙ্গক্রমে বলেন, ‘কর্ণফুলী সেতু লাগোয়া বশিরুজ্জামান চত্বরে ৬টি বাস কাউন্টার করে ইচ্ছমতো সড়কপথে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে।’ আইন প্রয়োগকারীরা আইন না মানলে অনিয়ম উৎসাহিত হয়ে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলেন এই পরিকল্পনাবিদ।
অন্যদিকে সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান মনে করেন, এ যুগে এসে কেউ যানজটের জন্য একতরফা পুলিশকে দোষারোপ করলে তা সমীচীন হবে না। শহরের প্রধান দুটি সড়ক বন্ধ, অনেক সড়কের অবস্থা নাজুক, তদুপরি আরও নানা কারণে যানজট হয় বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
আপনার মতামত লিখুন :