জাফর ওয়াজেদ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রবীন্দ্রনাথের প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান আমার কাছে বিশাল। যুদ্ধপীড়িত, গণহত্যার শিকার, বিপদাপন্ন, অসহায়, নিরাশ্রয় একটি জাতিকে রক্ষা শুধু নয় মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রবল বিরোধিতার মুখেও (এমনকি নিজ দেশেও) হাল ছাড়েননি। পাকিস্তানি কারাগারে আটক বাঙালির অবিসংবাদিত ও নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ ও মুক্তির দাবিতে বিশ্বজনমত গড়ে তুলেছিলেন। সেসব আজ ইতিহাসের অংশ। ৪৭ বছর পর আজ মনে পড়ছে- তার এই অবদানের কথা স্মরণ করে ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলো সে সময়ের এক কিশোর। বাঙালি জাতি, ছাত্র সমাজ এবং কিশোরদের পক্ষ থেকে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন ঢাকা সরকারি ল্যাবরটরী স্কুলের দশম শ্রেণি মানবিকের এই ছাত্রটি। অবশ্য ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে ৮ম স্থান অর্জন করেছিলো। প্রসঙ্গত, একই পরীক্ষায় শেখ রেহানাও অগ্রণী বিদ্যালয় থেকে মেয়েদের মধ্যে ৫ম স্থান অর্জন করেছিলেন।
দশম শ্রেণির ছাত্রটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি পত্র লিখেছিলেন। তাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং এদেশকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করতে সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন, তাতে সে কৃতজ্ঞ। দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ায় পুরো বাঙালি জাতির মতো তার পরিবারটিও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ছাত্রটির চিঠিটি অবশ্য প্রকাশ হয়নি। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহিয়সী ইন্দিরা গান্ধী পত্রের জবাবে তার চিঠির বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। জবাবে ‘মিসেস গান্ধী’ তাকে অভিনন্দন জানান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ায় তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। আশীর্বাদও করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর পত্রটির অনুলিপি ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ ছেপেছিলো মুখবন্ধসহ। অন্য কাগজ ছেপেছিলো কি না মনে নেই।
ঢাকা সরকারি ল্যাবরটরী স্কুলের এই ছাত্রটি ১৯৭৪-৭৫ ঢাকা কলেজ ও ১৯৭৬-১৯৮০ বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কলেজ জীবন থেকেই যিনি পুরোদমে লেখালেখি শুরু করে আজ বাংলা কথাসাহিত্যের একজন উচ্চাঙ্গের লেখক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। মহিয়সী ইন্দিরা গান্ধী তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। মনে আসে, সেই প্রার্থনা তাকে আন্তর্জাতিক সাহিত্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করবেই। স্কুল ও কলেজের সহপাঠীরা যাকে ডাকতো নামে, সেই ছাত্রটি আজ সবারই চির চেনা। সবারই পছন্দের মানব। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটা জাতির পক্ষ থেকে যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে সেদিনের কিশোরটি, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী হিসেবে শুধু নয়, সমকালের কিশোর হিসেবেও তার প্রতি টুপি খোলা স্যালুট। তিনি, মঈনুল আহসান সাবের। লেখক : সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :