ডেস্ক রিপোর্ট : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা ঘরদাইড় নদী এখন এলাকাবাসীর দুঃখ। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নদীটি। অথচ একসময় নদীতে ৫০-৬০ ফুট পানি ছিল। বর্তমানে পানি শুকিয়ে নদীটি রূপ নিয়েছে আবাদি জমি ও শিশুদের খেলাধুলার স্থানে। নদীতে পানি না থাকায় সেচের অভাবে হুমকিতে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো আবাদ।
স্থানীয় কৃষক ও ভূমিহীনরা দখল করে বিস্তীর্ণ নদীর বুকজুড়ে চালাচ্ছেন বোরো ধানের চাষ। নাব্য সংকটের কারণে একসময়ের স্রোতস্বিনী ঘরদাইড় নদীতে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ধান ও মৎস্যভা ার হিসেবে খ্যাত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঘরদাইড় নদীর অধিকাংশ স্থানে পলিমাটি জমে জেগেছে চর। আবার কোথাও হাঁটুপানি। নদীর ওপরের অংশে সবজির চাষাবাদ ও নিচের অংশে ধান রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। মনে হয় নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই।
এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার লোকজন ইঞ্জিনবাহিত ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযানে মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করত এ নদী দিয়ে। তখন এই ট্রলারই ছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন। ট্রলার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে এলাকার মানুষ। ঘরদাইড় নদী ভরাট হওয়ার কারণে তাও কালক্রমে বন্ধ হওয়ার পথে। এখন বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে এলাকার জেলে সম্প্রদায়। বাঁচার তাগিদে অনেকে চলে গেছে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়। ঘরদাইকান্দা গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, কৃষিকাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির চরম সংকটে পড়েছেন নদীপাড়ে বসবাসকারীরা। এ ছাড়া পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরারও সুযোগ নেই জেলেদের। এতে নদীপাড়ের গ্রামের জেলেরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে এই নদী খনন করা হোক। আজমিরীগঞ্জের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান জানান, ইরি-বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ঘরদাইড় নদী থেকে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ হাজার একর জমিতে পানি সরবরাহ করা হতো। কালের বিবর্তনে বছরের পর বছর পলি বা বালি জমে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এলাকার অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নদীটি খননের মাধ্যমে কৃষি ও দেশীয় মাছ উৎপাদনে অর্থনীতির চাকা সচল হতে পারে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, নদী খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ঘরদাইড় নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনার মতামত লিখুন :