তমাল মেহেদী : ২০১৫ সালে ডয়েচে ভেলের কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা হেলেন করিম। তিনি বলেন ‘নৌকায় রাজাকারেরা আমাকে জিজ্ঞাস করতো, এই ডিমের হালি কতো? ওপারে তোমার কে থাকে? আমি জবাব দিতাম । বলতাম, আমার স্বামী থাকে।সেখানে যাচ্ছি। তারা বুঝতেও পারতো না,ডিমের নিচে লুকিয়ে রাখা আছে গ্রেনেড।
একদিন দুই জন পাক সেনা আর তিন জন রাজাকার নৌকায় উঠেছে৷ আমিও সেই নৌকায় আছি৷ ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, এই তুমি কোথায় নামবে? আমি তাদের একটি জায়গার নাম বললাম।আমি জানতাম, ওই জায়গায় মুক্তিসেনা ভাইয়েরা ওৎ পেতে বসে আছে অস্ত্র নিয়ে। রাজাকারদের বললাম,সেখানে না নামলে তো আমি রাস্তা চিনতে পারবো না। বাধ্য হয়ে তারা আমাকে সেখানে নামানোর জন্য তীরে নৌকা ভেড়ায়৷ আমি নামার সাথে সাথে সেখানে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা নৌকায় তাদের উপর ব্রাশফায়ার করেন৷ দুই পাক সেনা এবং একজন রাজাকার সেখানেই মারা যায়৷ অন্য দু'জন রাজাকারকে ধরে আনা হয়৷''
সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের চর অঞ্চলে এভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড পারাপার ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন এই দুঃসাহসী যোদ্ধা হেলেন করিম। টাঙ্গাইলের মেয়ে হেলেন ১৯৭১ সালে বদরুন্নেসা কলেজে পড়তেন, জড়িত ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জিবীত হেলেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই প্রশিক্ষণ নিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেন। তিনি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। প্রথমদিকে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বন্দুক নিয়ে চর অঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় সতর্ক পাহারা দিতেন হেলেনসহ আরো কয়েকজন দুঃসাহসী নারী। রাজাকারেরা জেনে ফেলায় বেলকুচি আর্মি ক্যাম্প থেকে একদল পাক সেনা হামলা চালায়। তুমুল লড়াই বাধে। এক নারী মুক্তিযোদ্ধা ধর্ষিত হন। এরপরই হেলেন করিম মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড সরবরাহের দায়িত্ব পান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানি সেনা এবং রাজাকারদের অবস্থান ও পরিকল্পনা জানার জন্য গোয়েন্দাগিরির কাজ করেছিলেন এই দুঃসাহসী নারী। পাতিলে গ্রেনেড ভর্তি করে তার উপর ডিম সাজিয়ে নিয়ে যেতেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। ফেসবুক থেকে ।
আপনার মতামত লিখুন :