সুরাইয়া হেলেন
আমার ফেসবুকে প্রথম দিককার কথা। কাউকে চিনি না, ফ্রেন্ডলিস্টেও ২-৪ জন পূর্বপরিচিত ছাড়া কেউ নেই। মনে হয় একদম অপরিচিত নতুন কোনো জায়গায় এসে পড়েছি। কীভাবে স্ট্যাটাস দিতে হয়, নোটস লিখতে হয়, ট্যাগ, লাইক, কমেন্টস দিতে হয় কিচ্ছু জানি না। ক্লিক করলেই দেখি বড় বড় সব বিখ্যাত কবি, লেখক, সংবাদ উপস্থাপক, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকার ছবি আসে। তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে ভরসা পাই না। যদি রিজেক্ট করে, অপমানের লজ্জা সইতে পারবো না! এর আগে ব্লগিং করেছি প্রায় পাঁচ বছর। নিজস্ব ওয়েবসাইটেও অনেক লেখা আছে আমার। ইয়াহু, মিগ-৩৩, সুটসেন্ড, এগুলোতে এ.সি. আছে। ওগুলোতে চ্যাটও করেছি। সবচেয়ে বেশি চ্যাট করেছি মিগ-৩৩-এ! এই সাইটটির ওপর আমার লেখা একটি বইও আছে। নাম,‘নিঃসঙ্গ জনারন্য মিগ-৩৩’! এই সাইটটিতে একটি সুবিধা ছিলো, পৃথিবীর সব দেশের আলাদা আলাদা রুম আছে। আমি সব রুমে চুপচাপ বসে থাকতাম, সবার চ্যাট শুনে বুঝতে চাইতাম প্রতিটি দেশের লোকদের। কেউ ‘হাই’ বললেও উত্তর দিতাম না। কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে এলেই দেখতাম ওই দেশের অনেক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। প্রায় সবাইকেই অ্যাড করে নিতাম। ব্যক্তিগতভাবে নক করলে উত্তর দিতাম। এভাবে প্রায় সব দেশের বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে জেনে নিয়েছি, তাদের দেশ, প্রকৃতি, খাদ্য, পোশাক, সংস্কৃতি আর সর্বোপরি মানুষ সম্পর্কে। এগুলো আমার লেখায় দারুণভাবে কাজে লেগেছে। অনেক কিছুই ছিলো আমার জানার বাইরে, সেসব অজানা জেনে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি।
পৃথিবীটা আমার কাছে তার প্রতিটি পৃষ্ঠা খুলে দিয়েছে। আমি ডাক্তার বলে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত ভালো লাগা, মন্দ লাগা, গোপন বিষয়ও শেয়ার করে পরামর্শ চেয়েছে। পৃথিবীর আলোকিত দিকের সাথে সাথে এর অন্ধকার দিকও জেনেছি। এমন অনেক তথ্য যেগুলো বিশ্বাসের অযোগ্য। এগুলো লিখিনি আমি বইয়ে। যদি লিখতাম হয়তো আমাকে অশ্লীলতার দোষে অভিযুক্ত হতে হতো! যদিও এগুলো সব সত্যি। তবু আমার সাহস হয়নি, আমার পরিচ্ছন্ন ইমেজটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। হয়তো এগুলো লিখলে এক ধাক্কায়ই আমি বিখ্যাত হয়ে যেতাম! কিন্তু আমি পারিনি, আমার রুচি এখানে বাদ সেধেছে। এসব সাইটে যারা চ্যাট করে তাদের সবাইকে আমার কোনো না কোনোভাবে নিঃসঙ্গ মনে হয়েছে, যদিও প্রতিটি সাইটই জনবহুল, জনারন্য বলা চলে। তাই বইটির নাম,‘নিঃসঙ্গ জনারন্য’। ফেসবুক থেকে চলে গেলাম অন্য প্রসঙ্গে। ফিরে আসা যাক। তো, আমি মন খারাপ করে বসে থাকি। মিগের বন্ধুদের অনুরোধেই অনেক পরে আমি ফেসবুকে এসেছি। তারা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, আমি তাদের কনফার্ম করতে গিয়ে সব দিয়েছি ডিলিট করে। কীভাবে যে তাদের রিকোয়েস্ট পাঠাবো তাও জানি না। শেষে করলাম কী, ফেসবুকে পৃথিবীর যতো সুরাইয়া আছে সবার কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে লাগলাম! অবাক হয়ে দেখলাম এই নামের বেশির ভাগই বিদেশিনী। লিস্টে বন্ধু সংখ্যা কিছুটা বাড়লো। এসময় জাগৃতির দীপনের সাথে পরিচয়। তাকে খুলে বললাম দুঃখের কাহিনী। দীপন বললো, ‘আপা, আপনার প্রোফাইল পিকচার তো খালি। ওখানে ছবি দিন, আমি সিওর ৭দিনের মাঝে যদি আপনার কাছে ১০০ রিকোয়েস্ট না আসে, তখন বলবেন! মুশকিল হলো প্রোফাইল পিকচার কীভাবে দেয় তাও তো জানি না! আমার ওয়েবসাইটে একটিমাত্র ছবি আছে। যেভাবে আমি লেখা সিলেক্ট করে, কপি, পেস্ট করি, সেভাবে ছবিটাও প্রোফাইলে দিতে চেষ্টা করলাম। ইউরেকা, আমি পেরেছি। দীপনের কথাই সত্যি হলো। ৭দিন লাগলো না, দেখি শত শত রিকোয়েস্ট! সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমার লিস্টে প্রায় ৪ হাজার এর বেশি ফ্রেন্ড আছে। আরও প্রায় ২ হাজার এর মতো পেন্ডিং রয়েছে। আমি অ্যাড করছি না। শুধু যারা মেসেজ পাঠিয়ে অনুরোধ করে তাদের অ্যাড করি। বাকি নিজের হাতে রেখেছি, আমি যাতে রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারি। এই জিনিসটা আমার একদম পছন্দ নয়, কাউকে ব্লক বা আনফ্রেন্ড করে দেয়া। তবু মাঝে মাঝে করতে হয়, অবশ্য খুবই মন খারাপ করে এই কাজটি করি আমি। ভাবি কারোর মনে আঘাত দিয়ে ফেললাম না তো। মনে পরে সেই প্রথম দিককার দিনগুলোর কথা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :