আবুল কাইয়ুম
ফেসবুকে প্রায়শ দেখা যায় যে, অনেকেই নির্বিচারে ট-বর্গের (ট, ঠ, ড, ঢ, ণ) বর্ণগুলোর আগে ‘ণ’ স্থলে ‘ন’ দিয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠন করে থাকেন। অল্পসংখ্যক লেখক ব্যতীত অনেকেরই এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এই ভুল ঘটার কারণগুলো হলো :
১. ব্যাকরণসম্মত নিয়ম না জানা, ২. শুদ্ধ ভাষার চর্চায় মজ্জাগত অনীহা, ৩. লেখায় ও বর্ণ-মুদ্রণে অসাবধানতা, ৪. ক্ষুদ্রাকৃতি মনিটরে দৃষ্টিবিভ্রম সব ধরনের ভুলের বেলাতেই এই কারণগুলো প্রযোজ্য। আলোচ্য যুক্তব্যঞ্জন তৈরিতে ফেসবুকের অনেক বন্ধু সচরাচর যেসব ভুল করে থাকেন, সেগুলোর কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ‘চব্বিশটা ঘন্টাও পেলাম না, অথচ মনে হয় যেন পেয়েছি।’
মন্তব্য : ‘ঘন্টা’ ভুল বানান। ‘ন্ট’ (ন+ট) নয়, হবে ‘ণ্ট’ (ণ+ট)। শুদ্ধ বানান ‘ঘণ্টা’। ২. ‘লুন্ঠিত মানবতা আজ, কুসুম মরছে সেই ধকলে।’
মন্তব্য : ‘লুন্ঠিত’ ভুল বানান। ‘ন্ঠ’ (ন+ঠ) নয়, হবে ‘ণ্ঠ’ (ণ+ঠ)। শুদ্ধ বানান ‘লুণ্ঠিত’। ৩. ‘আমার হৃৎপিন্ড রে, তোকে ছাড়া কী করে বাঁচবো ত্রিভুবনে!’
মন্তব্য : ’হৃৎপিন্ড’ও ভুল বানান। ‘ন্ড’ (ন+ড), নয়, হবে ‘-’ (ণ+ড)। শুদ্ধ বানান ‘হৃৎপি-’। ৪. ‘এ ধরনের উক্তি মর্যাদা ক্ষুন্ন করে।’
মন্তব্য : ‘ক্ষুন্ন’ ভুল বানান। ‘ন্ন’ (ন+ন) নয়, হবে ‘ণ্ন’ (ণ+ন)। শুদ্ধ বানান হলো ‘ক্ষুণœ’।
এ ক্ষেত্রে যে ণত্ববিধি রয়েছে তা হলো, যুক্তব্যঞ্জনে ট-বর্গের বর্ণগুলোর (ট, ঠ, ড, ঢ, ণ) আগে ‘ণ’ হবে। যেমন : ণ্ট (ণ+ট) : কণ্টক, ঘণ্ট, ঘণ্টা, ঘণ্টি, নির্ঘণ্ট, নিষ্কণ্টক, বণ্টন, বণ্টিত।
ণ্ঠ (ণ+ঠ) : অকুণ্ঠ, অবগুণ্ঠন, কণ্ঠ, কণ্ঠস্থ, কুণ্ঠা, কুণ্ঠিত, গুণ্ঠন, শুণ্ঠি (শুকনো আদা), সুকণ্ঠী
- (ণ+ড) : অ-, আ-া, উচ্চ-, কা-, কু-, কু-লী, খ-, খ-ন, খ-িত, খা-া (খড়্গ), গ-, গ-া, গ-ি, গ-ার, গ-ূষ (হাতের কোষ), গা-িব (ধনুক), গু-া, চ-, চ-ী, চ-াল, ঠা-া, ডা-া, ডা-ি, ত-ুল (চাল), তা-ব, দ-, দ-িত, দ-নীয়, দ-বিধি, দ-মু-, দ-াজ্ঞা, দ-ায়মান, প-, প-শ্রম, প-িত, পা-িত্য, পা-ব (পা-ুরাজের পঞ্চপুত্র), পা-া (তীর্থস্থানের পূজারি), পা-, পা-, পা-, পাষ-, পি-, পি-ি, প্রচ-, বিত-া, ভ-, ভ-ামি, ভ-ুল, ভা-, ভা-ার, ভা-ারী, ভেরে-া, ম-, ম-ন (সাজসজ্জা, প্রসাধন), ম-প, ম-ল, -ম-লী, ম-া, ম-িত, মু-ু, মু-ন (কেশ কামানো বা ন্যাড়া করার কাজ), মু-িত, মেরুদ-, ল-ভ-, শু- (শুঁড়), শু-াল (হাতি), শু-িকা (আলজিভ), শিখ-ী, ষ- (ষাঁড়), ষ-া, হৃৎপি-
ণ্ঢ (ণ+ঢ ) : ঢুণ্ঢন (অন্বেষণ), ষণ্ঢ (নপুংসক)
ণ্ন (ণথন) : অক্ষুণ্ন, ক্ষুণ্ন, বিষণ্ন। কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রম ‘বিপন্ন, বিপদাপন্ন, আসন্ন। আর ‘ক্ষুণ্ন’ শব্দের সাথে ‘ক্ষুন্নিবৃত্তি’ শব্দটিরও সম্পর্ক নেই। এটি সন্ধিজাত (ক্ষুৎ+নিবৃত্তি=ক্ষুন্নিবৃত্তি)। তাই বানানে ‘ন’-এর দ্বিত্ব হয়েছে।
তবে বিদেশি শব্দের বেলায় ট-বর্গীয় বর্ণগুলোর আগে ‘ণ’ স্থলে ‘ন’ দিয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠন করতে হবে। যেমন, ব্যাডমিন্টন, ব্যান্ড, কিন্ডারগার্টেন, ক্যান্টিন, এজেন্ট, ওয়ারেন্ট, কম্পাউন্ডার, টেন্ডার, ফান্ড, বন্ড ইত্যাদি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :