ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক অবস্থা অতক্রিম করছে। প্রতিকুল অবস্থা উত্তরনে নানা ধারনের রাজনৈতিক ছক তৈরির চেষ্টা করছে দলটি। জোটকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের থেকে আপাতত বের হওয়ার পরিকল্পনা না করলেও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জোট ২০ দলকে বিলুপ্ত করারও চিন্তা করা হচ্ছে। মূলত জামায়াতকে কৌশলে মিত্রের তালিকা থেকে বাদ দিতেই এমন ভাবনা শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামগ্রিক বিবেচনায় বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের বেশির ভাগ নেতা বর্তমানে জামায়াত-বিচ্ছেদের পক্ষে। এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দেয়ার পক্ষে থাকলেও এখন ভিন্ন রকম ভাবনা শুরু হয়েছে। জামায়াতকে নিয়ে গড়ে তোলা ২০-দলীয় জোট কীভাবে বিলুপ্ত করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হয়েছে।
গত বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে জোটসঙ্গীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথমবারের মতো স্কাইপিতে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট থাকা না থাকা নিয়ে। পাশাপাশি জামায়াতকে বিএনপি জোটে রাখা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মিত্রের তালিকা থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতারা নিজেদের মতো করে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নানা দুর্বলতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সূত্রমতে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে রাখার বিরোধিতা করেন। বলেন, কয়েক বছর আগে যে বাস্তবতায় জামায়াতের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল সেটি আর এখন নেই। এখন জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। আন্দোলনেও তাদের পাশে পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় তাদের জোটে রেখে লাভ নেই। আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য তাকে সমর্থন করে বলেন, জামায়াত জোটে থাকুর অপর জোট সঙ্গীরাও চাচ্ছে না। আলোচনায় ২০ দলীয় জোট রাখারই প্রয়োজনীতাও নিয়ে সদস্যরা কথা বলেন। ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজন নেই বলেও মত আসে বৈঠকে। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জামায়াত প্রসঙ্গে বৈঠকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছেন। ২০ দলও তার হাতে গড়া। তার অনুপস্থিতিতে ২০ দলীয জোট ভেঙে দেয়া কতটা যৌক্তিক হবে। যদি ২০ দল বিলুপ্ত করা হয় তাহলে চেয়াপারসনের মতো নিয়েই করা হবে বলে সদস্যরা একমত হন। এ ছাড়া ২০ দল ভেঙে দিলে বা জামায়াতকে বাদ দিলে ক্ষমতাসীনরা কোন নতুন কৌশল করে কিনা তাও ভেবে দেখতে হবে বলেও বৈঠকে মত আসে।
সূত্র জানায়, জামায়াতের প্রসঙ্গের বাইরে ঐকফ্রন্টের বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার সমালোচনা করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল নাকি ভুল ছিল, তা ইতিহাস একদিন তুলে ধরবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন এ আশায় নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা ও বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। তখন ওই নেতাকেই তাদের শীর্ষ নেতা হিসেবে মেনে নেয়া উচিত ছিল কিনা এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।
সূত্রমতে, মূলত স্থাযী কমিটির বৈঠকে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট রাজনীতি বন্ধ করে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ি দলকে গোছানোর বিষয়ে অধকাংশ নেতারা একমত হন। সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থাযী কমিটির বৈঠকে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের তীর্যক মন্তব্যে ড. কামাল হোসেন ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের কাছে কারণ জানতে আগামী সপ্তাহেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে।
সূত্র : যায়যায় দিন
আপনার মতামত লিখুন :