শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১১:০৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১১:০৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রিয় আধুনিক মা-বাবা……..

কাজী তাহমিনা : অবশ্যই সন্তান লালনপালন বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ আমি নই। তবু কিছু ভাবনা মাথায় কিলবিল করছে বলেই এই লেখা।

আপনার সন্তানকে ‘হ্যা’ বলার পাশাপাশি ‘না’ বলতেও শিখুন। তাকে অতি স্বাচ্ছন্দ্য দেয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। সব কিছু খুব সহজে পেয়ে যেতে নেই,তাতে পাওয়ার আনন্দ হারিয়ে যায়। শিশুকে দামী দামী রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, রোবট, বন্দুক,পিস্তল কিনে দিচ্ছেন? ট্যাব, ভিডিও গেমস এ আসক্ত হতে দিচ্ছেন, যেখানে হাসতে হাসতে বাচ্চা ঠুস ঠাস হাজার রকম গুলি, বন্দুক, বোমা মেরে কল্পিত মানুষজন মেরে ফেলছে? আপনি হয়তো জানেননা, নিজের অজান্তেই শিশুর মনোজগতে নৃশংসতার বীজ বুনে দিচ্ছেন।

তাকে গাড়ির রেস খেলতে দিচ্ছেন অনবরত। হয়তো তার শিশুমনে, শিশুকাল থেকে ঢুকে যাচ্ছে - জীবনে চাই অনিঃশেষ উত্তেজনা, মিনিটে মিনিটে তীব্র গতি আর বাঁক নেয়ার আকাক্সক্ষা। শিশুকে সারাক্ষণ টিভির স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকতে না দিয়ে তাকে আকাশ দেখতে শেখান; তাকে ফুলের রঙ, ঘাসের ঔজ্জ্বল্য, পাখি, প্রজাপতি, মাছ, গাছ ভালোবাসতে শেখান। বাসার বারান্দার বাগান, টবের গাছ যত্ন নেয়ার কাজটা তাকে দিয়ে দেন।

অজস্র দামী জামা, জুতো, বাহারী জিনিস পত্র পেতে পেতে তার ভেতর সামান্য কিছুতে আনন্দিত হওয়ার বোধ নষ্ট হয়ে যাবে। বরং কিছুই নেই যাদের, তাদের সাথে সব ভাগ করে নেয়ার আনন্দ শেখাতে পারেন।

বেড়াতে যাওয়ার মানেই ফাস্টফুড পয়েন্টে যাওয়া আর চেক ইন/সেল্ফি তোলা এই সংস্কৃতি থেকে সরে আসুন। প্রতিদিন কেএফসি /বিএফসি না গিয়ে শিশুকে বাসায় বানিয়ে দিন চিকেন ফ্রাই বা থাই স্যুপ। আর ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক বা ধানমন্ডি লেক।

শিশুকে স্বনির্ভর হতে শেখান, তাকে উপার্জন করতে শেখান; ছোট ছোট ভালো কাজের বিনিময়ে তাকে পুরস্কার ও পকেটমানি দিন। আর খারাপ কাজে দিন পরিমিত শাস্তি!

শিশুকে খেলা ধূলায় উৎসাহিত করুন, সত্যিকার খেলা, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করুন। ভার্চুয়াল খেলা,টিভি টাইম কমিয়ে দিন।

শিশুর হাতে খুব শিশুকাল হতে রঙিন বই তুলে দিন যাতে সে পড়তে শেখার আগে থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহবোধ করে; বই ভালোবাসতে শেখে। তাকে আরো দিতে পারেন রঙ তুলি, ছবি আঁকার হরেক সরঞ্জাম। শিশুর হাতে তুলে দিন নিজস্ব চিন্তাজগত বিকাশের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সবচেয়ে বড় অস্ত্র- বিশ্বসাহিত্যের সেরা সব বই।

তবে তার আগে নিজে বই পড়ার অভ্যাস করুন যাতে শিশু দেখে দেখে শেখে।

তার সাথে গল্প করুন, প্রশ্নের জবাব দিন, গান গেয়ে শোনান, নিজেই টিভির বিকল্প হয়ে উঠুন ; তাকে সময় দিন। শিশুর জন্য টাকা সরবরাহের উৎস না হয়ে, হয়ে উঠুন তার বন্ধু ও সহযাত্রী। তার মনের খবর রাখার চেষ্টা করুন। শিশুকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখুন;তার আগে নিজে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসুন।

আপনি আজকে এ প্লাস পাওয়ার দৌড়ে শিশুর শৈশব কেড়ে নিচ্ছেন, তাকে জানার প্রতি আগ্রহী না করে মুখস্থ করে নাম্বার পাওয়াকেই পরম পাওয়া মনে করছেন- আপনার এই অতি চাওয়াই একদিন বুমেরাং হবে। আপনার সমস্ত চাওয়ার বোঝা শিশুর উপর চাপিয়ে দেয়া বন্ধ করুন।

তাকে ধর্মের ঠিক দীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। শুধু হুজুর রেখে ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ করালেই হবেনা, তাকে অর্থ বুঝিয়ে ধর্মের মূল বানী সম্পর্কে ধারণা দিন। আচার সর্বস্বতা বাদ দিয়ে জীবন আচরণে তার প্রয়োগ আগে নিজে করুন- বাকিটা শিশু দেখে দেখেই শিখে যাবে।

আপনি যদি আপনার নিকট জন, বা অধীনস্থ দের সাথে খারাপ আচরণ করেন;আর আশা করেন যে ভালো স্কুলে গেলেই শিশু ভালো আচরণ শিখবে, আপনি আছেন বোকার স্বর্গে!

আপনি যদি মিথ্যা বলেন; অনাচার করেন, অসৎ উপার্জনের টাকা দিয়ে দুনিয়াটা কিনে দিতে চান আপনার শিশুকে, নিশ্চিত থাকতে পারেন- আপনার শিশু আপনাকে দেখে এসবই শিখবে। তাকে যত ভালো প্রতিষ্ঠানেই পাঠান না কেন আম গাছে আমই হওয়ার কথা এবং অযত্ন, অবহেলায় সেই আমে পোকা ধরতেই পারে! লেখক : সিনিয়র লেকচারার, ইর্স্টান ইউনিভার্সিটি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়