রাশিদ রিয়াজ : মাঝ বয়সে পা দেবার আগেই নারীদের শুনতে হয়, ‘বিয়ে করে নাও। এর পর আর বাচ্চা হবে না।’ আর বিয়ে হলে দম্পতির উপর পরিবারের চাপ আসে বাচ্চা নেওয়ার। কারণ, একটাই। ভারতের একটি শহরের এক নামজাদা ইনফার্টিলিটি সেন্টারে সম্প্রতি ১৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে আসেন বাবা। ছেলের শুক্রাশয়ে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। কোমোথেরাপির পর ক্যান্সার যাতে তার ছেলের বংশবিস্তারের অন্তড়ায় না হয়ে দাঁড়ায়, তাই ‘স্পার্ম ফ্রিজিং’-এর মাধ্যমে শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখতে চান বাবা।
ডিভোর্সের মামলা চলছে চল্লিশ ছুঁই ছুঁই মহিলা কর্পোরেট কর্মীর। সন্তান হয়নি আগে, কিন্তু ভবিষ্যতে সন্তান নিতে চান। তাই নিজের ডিম্বাণু তৈরি বন্ধ হওয়ার আগেই তা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারও গন্তব্য ইনফার্টিলিটি সেন্টার। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন প্রজননক্ষমতাকে থমকে দেওয়া (ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন) সম্ভব শুক্রাণু, ডিম্বাণু অথবা ভ্রূণ সংরক্ষণের মাধ্যমে। স্বাস্থ্যজনিত কারণে অথবা নিজেকে ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’-এর ঘোড়দৌড় থেকে বাঁচাতে অনেক তরুণ-তরুণীই এখন বেছে নিচ্ছেন ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন পদ্ধতি।
আইভিআই ফার্টিলিটি কেন্দ্রের ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ মৌমিতা নাহা জানান, ‘পুরুষদের শরীর থেকে শুক্রাণু, স্ত্রীদের থেকে ডিম্বাণু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে পৃথকভাবে অথবা আইভিএফের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নিষেক ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করে তা ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হয় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়। দাতা এর পর তার প্রয়োজন মতো সেগুলি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারেন বংশবৃদ্ধির জন্য।’ মোটামুটি ৩৫-বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে মেয়েদের শরীরে কমতে থাকে ডিম্বাণু। পুরুষদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অবশ্য কম। পঞ্চাশের দোরগোড়াতেও অনেক পুরুষেরই শরীরে সন্তান ানধারনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণের শুক্রাণু মজুত থাকে।
আইভিএফ বিশেষজ্ঞ রোহিত আগরওয়ালের বক্তব্য হচ্ছে, ‘ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন আজকের জেনারেশনের কাছে একটা বিকল্প পথ হয়ে উঠেছে। হিসেব করে দেখলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কাটাতে যতটা আর্থিক এবং মানসিক ধকল যায়, তার চেয়ে এই সংরক্ষণের খরচ অনেকটাই কম।
বিশিষ্ট ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগির বলছেন, ‘ভ্রূণ পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। তার পর ভ্রূণে কিছু জেনেটিক পরিবর্তন হয় যা থেকে সন্তানের কিছু জিনঘটিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর ভ্রূণ সংরক্ষণের সাকসেস রেট ৯০ শতাংশ। ডিম্বাণু সংরক্ষণের সাকসেস রেট সাধারণত ৬০ শতাংশ মতো। কিন্তু, একবারে যদি ২০টি ডিম্বাণু সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ১২টার মতো ডিম্বাণু ব্যবহারযোগ্য থাকে।’
আপনার মতামত লিখুন :