লুৎফর রহমান হিমেল : শ্রেণিকক্ষে একদিন এক শিক্ষক ছাত্রদের একটি গল্প বললেন। গল্পটি এ রকম : একবার একটা লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়লো। লঞ্চের এক দম্পতি তখন একটা লাইফবোট পেলো। কিন্তু স্বামী বুঝে ফেললো সেখানে একজনের বেশি উঠতে পারবে না। লোকটা তার স্ত্রীকে পেছনে ঠেলে দিয়ে নিজেই লাফিয়ে উঠে পড়লেন। ডুবন্ত লঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে ওই নারী স্বামীর উদ্দেশ্যে একটি মাত্র বাক্যই চিৎকার করে বলেছিলো : শিক্ষক এটুকু বলে থামলেন, চারদিকে তাকিয়ে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাইলেন, ‘তোমাদের কী মনে হয়? কী বলেছিলো সেই নারী?’...‘তুমি একটা ইতর, স্বার্থপর। আমি কী অন্ধই না ছিলাম।’ অধিকাংশ ছাত্রই এ ধরনের জবাব দিলো।
শিক্ষক খেয়াল করলেন একটা ছেলে পুরোটা সময় ধরেই চুপ, তার মতামত জানতে চাইলে সে বললো, ‘স্যার, আমার বিশ্বাস, ওই নারী বলেছিলেন, আমাদের বাচ্চাটার যতœ নিও, ওকে দেখে রেখো।’ বিস্মিত হয়ে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি এ গল্প আগে শুনেছো, তাই না।’ ছেলেটি ‘না’সূচক জবাব দিয়ে বললো, ‘আমার মা’ও অসুখে মারা যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে বাবাকে এ কথাই বলেছিলেন।’ শিক্ষক একমত হলেন, তুমিই ঠিক। লঞ্চটা ডুবে গেলো এবং বাড়ি ফিরে লোকটা একাকী মেয়েকে যতœ করে বড় করলেন। লোকটি মারা গেলো। এর বেশ কয়েক বছর পর তাদের কন্যা বাবার একটি ডায়েরি পেলো। সেখানে কন্যা আবিষ্কার করলো, লঞ্চযাত্রায় যাওয়ার আগেই তার মায়ের দুরারোগ্য অসুখ ধরা পড়েছিলো, চরম মুহূর্তে তার বাবা তাই বাঁচার একমাত্র উপায়ের সদ্ব্যবহার করেছেন। ডায়েরিতে তার বাবা লিখেছেন, ‘আমারও তোমার সাথে সাগরের গভীর অতলে ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, কিন্তু শুধু মেয়ের কথা ভেবে তোমাকে একাই সাগরতলে চিরদিনের জন্য ছেড়ে আসতে হলো।’ গল্প শেষ হলো, ক্লাসে কারো কোনো কথা নেই। সাহিত্যের ভাষায় পিনপতন নীরবতা যাকে বলে। সবার চোখেই জল তখন। শিক্ষক বুঝলেন, শিক্ষার্থীরা গল্পের শিক্ষাটা ধরতে পেরেছে। তার গল্প বলা সার্থক।
ভালো এবং মন্দ, জগৎ-সংসারের সব কিছুর পেছনেই অনেক জটিল সমীকরণ আছে যা সবসময় বোঝা যায় না। অন্যদিকে নারী আর পুরুষ এভাবে পরিপূরক ভূমিকা রাখে বলেই এই দুনিয়া হয়ে উঠে স্বর্গ। জগতে কারো ভূমিকাই যে কম নয়, তা যেন আমরা ভুলে না যাই। ফেসবুক থেকে