আমেনা বেগম বিউটি : দালালি কর্মটি অনেকভাবে হয়ে থাকে। যথা : ১. ক্রেতার পক্ষে দালালি। ২. বিক্রেতার পক্ষে দালালি। ৩. উভয়পক্ষের হয়ে দালালি। ৪. পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দালালি। ৫. পারিশ্রমিক বা কোনো প্রকার বিনিময়বিহীন দালালি। ৬. ব্যক্তি ইমেজ বা ব্যক্তির সামাজিক সম্মান-সুনামের বিনিময়ে ২/১টি কথা বলে বা একটু সুপারিশ করে ক্রয়-বিক্রয় করিয়ে দেওয়া। ৭. পেশা হিসেবে দালালি করা। ৮. ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র বা আড়তের নির্দিষ্ট রীতি মোতাবেক প্রতি পণ্য বা চালান বা বিলের বিপরীতে শতকরা বা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে ধার্যকৃত হারে দালালি করা। ৯. নির্দিষ্ট না করে ক্রেতা বা বিক্রেতা সন্তুষ্টচিত্তে দালালকে কিছু সম্মানী বা হাদিয়া বা বকশিশ নামে প্রদান করা এবং বিনা বিবাদ ও বাক্যে দালালের তা গ্রহণ করে নেওয়া। ১০. ক্রেতা-বিক্রেতার ধার্যকৃত অঙ্কের বা অবগতির বাইরে অতিরিক্ত বা কম মূল্যে বিক্রি করে বা ক্রয় করে তা নিজে গ্রহণের মাধ্যমে দালালি করা। ১১. বিয়ের দালালি।
‘ওকালত’ ‘শাফাআত’ ‘দালালি’ শব্দত্রয় যথাক্রমে ‘প্রতিনিধিত্ব করা’ বা ‘সুপারিশ করা’ বা ‘কারও পক্ষ হয়ে কাজ করা’- এগুলো পরস্পর ভাবার্থ বিবেচনায় অনেকটা কাছাকাছি মনে হলেও পারিভাষিক বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও পৃথক বিধিবিধান সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে। উদাহরণত কারও প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাকে নিযুক্ত হতে হয় কিংবা অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হয়। কিন্তু দালালি করার ক্ষেত্রে তেমনটি জরুরি নয়, যদিও তেমনটি বাঞ্ছনীয় ছিল। তার কারণ, সংশ্লিষ্ট দালালরা অনেক ক্ষেত্রেই তেমন নিয়োগ বা চুক্তি ছাড়াই উপযাচক হয়ে কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে থাকে।
একইভাবে সুপারিশ কর্ম ও দালালি কর্মে বিধানগত বিভিন্ন পার্থক্যের পাশাপাশি অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে- সুপারিশ কর্ম অন্যায় বা মন্দ কাজে হয়ে থাকলে তার ইহকালীন দায়দায়িত্বের পাশাপাশি পরকালীন মারাত্মক পরিণতি আছেই, আর তা যদি ভালো ও কল্যাণ কাজে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো পারিশ্রমিক/সম্মানী গ্রহণ করা নাজায়েজ এবং তা দালালির বিধি মোতাবেক ঘুষ-উৎকোচরূপে পরিগণিত। (তাফসির মা’আরিফুল কুরআন, সৌদি ছাপা, পৃ. ২৭০-২৭১)
পক্ষান্তরে মিথ্যা ও প্রতারণা ইত্যাদি মুক্ত বিধি মোতাবেক দালালির পারিশ্রমিক/বিনিময় হালাল ও বৈধ হয়ে থাকে। সুতরাং এসব পার্থক্য বিচেনায় রেখে সংশ্লিষ্ট বিধান কী হবে? তা চয়ন-নির্ধারণ প্রয়োগে সচেতন থাকতে হবে।
দালালি পেশা বা দালালি কর্মটি যখন শরিয়তের ব্যাখ্যা ও বৈধতার মাপকাঠি মোতাবেক হবে, অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা মৌখিক বক্তব্য অনুযায়ী দালালের দুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রয়োজনে কাগজপত্র ইত্যাদির ফটোকপি সংগ্রহ ও সরবরাহ কাজে সময়দান এবং যথাসাধ্য সংশ্লিষ্ট ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা ইত্যাদি কাজ নির্ধারণ করার পাশাপাশি তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক নির্দিষ্টভাবে জানা থাকতে হবে। তাহলেই তার পক্ষে দালালি কর্মটি আইনত বৈধ বলা যাবে। তার কারণ, সে যদি সংশ্লিষ্ট কর্মের ভালো-মন্দ না বোঝে কিংবা তাতে ত্রুটি বা প্রতারণা থাকা সত্ত্বেও মধ্যস্বত্ব ভোগের লোভে অন্যায়ভাবে ক্রেতা/বিক্রেতাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত হয়, তাহলে সেও সংশ্লিষ্ট কর্মে অযোগ্য ও প্রতারক বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই দালালি কর্মকে বৈধ বলা যাবে না। তেমন কিছু ঘটলে ক্রেতা বা বিক্রেতার প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধের শাস্তির মধ্যে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দালালও অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
আপনার মতামত লিখুন :